
নিজেরা কাদা–ছোড়াছুড়ি, মারামারি ও কাটাকাটি করলে দেশ ও জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে বলে সতর্ক করেছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
আজ, মঙ্গলবার ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে,রাজধানীর রাওয়া ক্লাবে জাতীয় শহীদ সেনা দিবস উপলক্ষে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বক্তব্য রাখেন।
তিনি আরও বলেন, “আজকে একটা বেদনাবিধুর দিবস। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আমরা এই ৫৭ জন চৌকস সেনা অফিসার কে হারিয়েছি এবং শুধু তাই নয়, তাঁদের কিছু কিছু পরিবারবর্গের সদস্যদের আমরা হারিয়েছি
সেনাপ্রধান তার বক্তব্যে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে বলেন, “পিলখানা হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণটাই বিডিআর সদস্য দ্বারা সংঘটিত, ফুলস্টপ, কোনো ‘ইফ’ এবং ‘বাট’ নাই।”
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তার বক্তব্যেশান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা প্রসঙ্গে বলেছেন, এই দায়িত্ব শুধু সেনাবাহিনীর একার নয়। তিনি উল্লেখ করেন, দেশের নিরাপত্তা ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী এককভাবে কাজ করছে না, বরং এতেপুলিশ বি জিবি র্যাব আনসার ভিডিপি সহ বিভিন্ন বাহিনীও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে।
তিনি বলেন, “দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আমি ৩০ হাজার সৈন্য নিয়ে কাজ করছি, কিন্তু এই সংখ্যাটি কখনও স্থির থাকে না। কিছু সৈন্য নিয়োজিত থাকে, আবার কিছু সৈন্য ক্যান্টনমেন্টে চলে যায়। এর মাধ্যমে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়, তা পূরণ করা খুবই কঠিন। তবুও আমরা দিনরাত চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তার বক্তব্যে”অবাধ, সুষ্ঠ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন” এর গুরুত্বের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি জানিয়েছেন, দেশের স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সফলতা এই ধরনের নির্বাচনের ওপর নির্ভরশীল।
সেনাপ্রধান সুষ্পষ্টভাবে বলেছেন যে, নির্বাচন প্রক্রিয়া যদি সুষ্ঠু, অবাধ এবং সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে পরিচালিত হয়, তবে তা দেশের গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। এর মাধ্যমে জনগণের মতামত এবং ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন হবে, যা দেশের ভবিষ্যৎ এবং মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করবে।
এমন নির্বাচন জাতির ঐক্য, গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সাহায্য করবে, যেহেতু নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে জনগণের স্বাভাবিক অধিকার।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, তার বক্তব্যে সেনাবাহিনীর প্রতি আক্রমণ না করার বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আক্রমণ কিংবা বিভেদ সৃষ্টি করা ঠিক হবে না।” তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন যে, যদি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা সমালোচনা করা হয়, তবে সেটা জাতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা বিপন্ন হতে পারে।
এছাড়া, তিনি আরও বলেন, সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে, জাতির মঙ্গল এবং উন্নতির জন্য।
সেনাপ্রধান সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যদি নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে একসাথে কাজ না করতে পারেন, নিজেরা যদি কাদা ছোড়াছুড়ি করেন, মারামারি-কাটাকাটি করেন, এই দেশ ও জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি আজকে বলে দিলাম, নইলে আপনারা বলবেন, আমি আপনাদের সতর্ক করিনি। সেনাপ্রধান তার বক্তব্যে দেশ ও জাতির প্রতি তার অবিচলিত বিশ্বস্ততা এবং পেশাদারিত্বের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “আমার কোনো ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা নেই। আমার একমাত্র আকাঙ্ক্ষা হলো, দেশের ও জাতির জন্য কাজ শেষ করে সেনাবাহিনীতে ফিরে আসা।