
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম দলের পক্ষ থেকে একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন। ঘোষণাপত্রে দলের প্রতিষ্ঠা এবং উদ্দেশ্যগুলো তুলে ধরা হয়। দলটি গণতান্ত্রিক, সমতাভিত্তিক এবং জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ করেছে। এই সমাবেশে দলটির প্রতিষ্ঠাতা নাহিদ ইসলাম দলটির ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। দলটি জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে, এবং এর মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত তৈরির লক্ষ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, বঙ্গীয় ব-দ্বীপের জনগণ হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের পর ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। তবে শোষণ ও বৈষম্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়নি।
দীর্ঘ ২৩ বছর সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন হয়। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে দেশের জনগণকে বারবার গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে হয়েছে।
১৯৯০ সালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সামরিক শাসন পতন ঘটানো হয়, কিন্তু এরপরও গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বিগত ১৫ বছর ধরে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে, বিরোধী মতরোধ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, দুর্নীতি এবং অর্থপাচার এক অভূতপূর্ব মাত্রায় বেড়ে গেছে।
জুলাই ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতা এক অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই শাসনব্যবস্থার পতন ঘটিয়েছে, তবে এই পতন শুধুমাত্র সরকারের পরিবর্তন নয়, বরং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা ছিল।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) একটি গণতান্ত্রিক, সমতাভিত্তিক ও জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
দলের লক্ষ্য সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠা, যা একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরি করবে এবং সংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র রোধ করবে।
তারা গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন করতে চায়।
দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, তারা এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি চায় যেখানে ঐক্য, ন্যায়বিচার ও মেধা প্রতিষ্ঠিত হবে, এবং দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কোনো স্থান থাকবে না।
দলের লক্ষ্য হলো সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগণের কণ্ঠস্বরকে মূলধারায় আনা এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।
অর্থনীতি নিয়ে, দলটি স্বনির্ভর, আয়-বৈষম্যহীন এবং প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীল এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চায়, যেখানে সম্পদ একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হাতে পুঞ্জীভূত হবে না এবং সম্পদের সুষম পুনর্বণ্টন নিশ্চিত করা হবে।
তারা বেসরকারি খাতের সিন্ডিকেট ও গোষ্ঠীস্বার্থ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেবে এবং ভোক্তা ও জনস্বার্থ সংরক্ষণ করবে।
তারা আঞ্চলিক সহযোগিতা ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে শক্তিশালী অর্থনীতি গড়তে চায় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে জোর দিয়ে একটি টেকসই, আধুনিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করবে।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, তারা একটি ন্যায্যতা ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সংকল্পবদ্ধ, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের কণ্ঠস্বর গুরুত্বপূর্ণ হবে এবং মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত থাকবে।
তারা এমন একটি বহুত্ববাদী সমাজ চায় যেখানে জাতিগত, সামাজিক, লিঙ্গীয়, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষা করা হবে এবং দারিদ্র্য, বৈষম্য ও ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে সুরক্ষা প্রদান করা হবে।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, জুলাই ২০২৪ এর অভ্যুত্থান কেবল ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে জয় নয়, বরং এটি ভবিষ্যৎ নির্মাণের শপথ।
দলটি সংগ্রামের মাধ্যমে নতুন স্বপ্ন দেখা, নতুন পথচলা এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছে।
সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার জন্য তারা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে, এবং এটিকে একমাত্র প্রতিজ্ঞা হিসেবে দেখছে।
এভাবেই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বাংলাদেশের গণতন্ত্র, সাম্য এবং মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি নতুন রাজনৈতিক ধারণা এবং সংস্কৃতি নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়।