
লাইলাতুল কদর (যা “শাহরুল কদর” বা “নির্ধারিত রাত্রি” হিসেবে পরিচিত) হলো ইসলামের এক বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ রাত, যা রমজান মাসের শেষ দশ দিন (বিশেষত ২৭তম রাত্রি) পাওয়া যায়। এই রাতে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে অনেক রহমত ও মাগফিরাত (ক্ষমা) বর্ষণ করেন এবং সারা বছরের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়। মুসলিমরা এই রাতে বিশেষ ইবাদত ও আমল করে থাকে। লাইলাতুল কদরে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ আমল বা কাজ:
১. নফল নামাজ (তাহজুদ নামাজ) পড়া
লাইলাতুল কদরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো রাতভর নফল নামাজ পড়া (তাহজুদ)। এটি আল্লাহর কাছে দোয়া, প্রার্থনা এবং ক্ষমা চাওয়ার একটি অত্যন্ত সেরা মাধ্যম।
হাদীসে এসেছে:
“যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ইবাদত করবে ইমান ও ইহতিসাবের সাথে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।” (বুখারি, মুসলিম)
২. দোয়া ও আযকার করা
এই রাতে আল্লাহ তাআলা সর্বাধিক ক্ষমাশীল। তাই মুসলমানরা বেশি বেশি দোয়া করতে থাকেন। বিশেষ করে উম্মুল মুসলিমিন হাদীস অনুযায়ী, “اللهم إنك عفو تحب العفو فاعف عني” (আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুও তুহিব্বুল আফা ফাআফু আন্নি) – “হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করুন।”
এই দোয়া বিশেষভাবে লাইলাতুল কদরে পাঠ করা হয়।
৩. কুরআন তিলাওয়াত করা
কুরআন তিলাওয়াত করা হলো লাইলাতুল কদরের একটি বড় আমল। এই রাতে কুরআন পড়া বিশেষভাবে পুরস্কৃত হয় এবং এক আয়াতের জন্য এক পাহাড়ের মতো সওয়াব পাওয়া যায়।
কুরআন তিলাওয়াত করে মানুষ আল্লাহর কাছ থেকে হেদায়াত, রহমত ও বরকত লাভ করতে পারে।
৪. যিকির ও তাসবীহ করা
লাইলাতুল কদরের রাতে বেশি বেশি যিকির, তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবর) ও আল্লাহর গুণগান করা এক মহান আমল। এর মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর কাছ থেকে পুণ্য ও ক্ষমা আশা করতে পারে।
এটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাত হওয়ায়, যিকির ও তাসবীহ পাঠে অংশগ্রহণ করা এক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।
৫. দান-খয়রাত করা
এই রাতে যাদের হাতে আছে, তাদের উচিত দান-খয়রাত করা, বিশেষ করে যাদের কোনো দুঃখ, অভাব ও অকাল আছে। এতে আল্লাহর রহমত ও বরকত বৃদ্ধি পায় এবং সওয়াব লাভ হয়।
হাদীসে এসেছে:
“যে ব্যক্তি ইমান ও সাওয়াবের প্রত্যাশায় লাইলাতুল কদরে ইবাদত করবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।” (বুখারি, মুসলিম)
অতিরিক্ত দ্রষ্টব্য:
লাইলাতুল কদর কেবল এক রাতের ব্যাপার নয়, বরং রমজান মাসের শেষ দশ দিন এক বিশেষ সময়। রাসূল (সা.) বলেছেন যে, “লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশ রাতে খোঁজা উচিত।”
এছাড়া, এই রাতে বিশেষভাবে গুনাহ মাফ, পরিত্রাণ, এবং আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের জন্য আরও ইবাদত এবং তাওবা করতে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়।