
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ঐতিহাসিক বৈঠক: বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায়
শুক্রবার (২৮ মার্চ) চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে অনুষ্ঠিত এক ঐতিহাসিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করার জন্য একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। বৈঠকে দু’দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়, যা দুই দেশের সম্পর্ককে দৃঢ় করতে সহায়ক হবে।
চীনা প্রেসিডেন্টের অভিনন্দন ও সহযোগিতা প্রস্তাব
বৈঠকের শুরুতে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসকে বিশেষ সম্মান জানিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ চীনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী, এবং চীন বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বাণিজ্য, বিনিয়োগ, এবং উন্নয়ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন।
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশের দ্রুত বিকাশে সহায়তার জন্য চীনের উন্নয়ন অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ারও প্রস্তাব দেন। তিনি জানান, চীন বাংলাদেশকে শূন্য শুল্ক সুবিধা প্রদান অব্যাহত রাখবে এবং ২০২৮ সালের শেষ পর্যন্ত এই সুবিধা বৃদ্ধি করবে। এছাড়া, তিনি চীন-বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ও বিনিয়োগ চুক্তি শুরু করতে চান, যা উভয় দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।
চীনা বিনিয়োগে বড় পরিবর্তন: বাংলাদেশে শিল্প পার্ক নির্মাণ
শি জিনপিং বাংলাদেশের জন্য একটি চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং শিল্প পার্ক নির্মাণে চীনের সহায়তার কথা ঘোষণা করেন। এছাড়া, চীন বাংলাদেশে আরও চীনা উৎপাদন কারখানা স্থানান্তর এবং চীনা বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবে বলে জানান। তিনি বাংলাদেশের বাজারে চীনা পণ্যের প্রবাহ বৃদ্ধি এবং বিআরআই প্রকল্পে ‘উচ্চমানের’ সহযোগিতার কথাও উল্লেখ করেন।
চীন-বাংলাদেশ সহযোগিতায় নতুন দিগন্ত
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আরও বলেন, বাংলাদেশকে উন্নত চিকিৎসা সুবিধা দেওয়ার জন্য চীন বাংলাদেশে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। তিনি ইউনান এবং চীনের অন্যান্য প্রদেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে আরও বাংলাদেশিদের আমন্ত্রণ জানান। প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশের তরুণদের জন্য নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে চীনের সহায়তা প্রয়োজন।
রোহিঙ্গা সংকট ও অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের সহায়তা কামনা করেন এবং চীন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত জনগণের প্রত্যাবাসনে পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে।
ব্যবসা, প্রযুক্তি ও পরিবহন খাতে যৌথ সহযোগিতার আলোচনা
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশ ও চীন ব্যবসা, প্রযুক্তি, এবং পরিবহন খাতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করে। চীনের রাষ্ট্রপতি তিস্তা নদী প্রকল্পের জন্য চীনের সমর্থন, বহুমুখী যুদ্ধ বিমান ক্রয় এবং দক্ষিণ চীনা শহর কুনমিংকে বাংলাদেশের বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য পরিবহন সংযোগের উন্নয়নেও সহায়তা প্রস্তাব করেন।
অধ্যাপক ইউনূসের চীনে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার আমন্ত্রণ
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস চীনকে বাংলাদেশে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার আমন্ত্রণ জানান, যা দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় আরও বৃদ্ধি করবে।
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ:
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে তার সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করতে চায়। দুই দেশের নেতারা এই বৈঠকে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছেন, যা বহু দশক ধরে স্থায়ী হবে।