১০:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জনসভায় নতুন শর্ত: ৭২ ঘণ্টা আগে পুলিশের অনুমতি

নির্বাচন কমিশন (ইসি) এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা সংশোধন করতে যাচ্ছে। নতুন খসড়া অনুযায়ী, কমিশন মিছিলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে এবং জনসভা আয়োজনের জন্য পুলিশি অনুমতি নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেবে।

মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার সিদ্ধান্ত,

এখন পর্যন্ত নির্বাচনী আচরণ বিধিমালায় সব ধরনের মিছিল বা বিক্ষোভ নিষিদ্ধ ছিল। তবে, সংশোধিত খসড়ায় এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রস্তাবিত বিধিমালায় মিছিল বা বিক্ষোভ আয়োজনের ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ নিষেধাজ্ঞা রাখা হয়নি, তবে যন্ত্রচালিত যানবাহন বা মশাল ব্যবহারের অনুমতি থাকবে না।

জনসভা আয়োজনের জন্য নতুন শর্ত

জনসভা বা পথসভা আয়োজনের ক্ষেত্রে নতুন শর্ত যোগ করা হয়েছে। ৭২ ঘণ্টা আগে পুলিশের অনুমতি নিতে হবে এবং ৪৮ ঘণ্টা আগে স্থান ও সময় পুলিশকে জানাতে হবে। এই পদক্ষেপটি নির্বাচনী শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নেয়া হচ্ছে। আর পোস্টার ব্যবহারের পরিবর্তে ব্যানার ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, যেখানে সাদা-কালো কাপড়ের ব্যানার ব্যবহার করতে হবে এবং প্রার্থী বা দলের প্রধান ব্যতীত কারো ছবি ব্যবহার করা যাবে না।

অনলাইনে প্রচারের জন্য আইনি কাঠামো

প্রথমবারের মতো অনলাইনে প্রচারের জন্য আইনি কাঠামো তৈরি করতে যাচ্ছে কমিশন। প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দের আগে ভিডিও কনটেন্ট, বিজ্ঞাপন বা অন্যান্য প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করতে পারবেন, তবে তা ভোটগ্রহণ শুরুর ৪৮ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে।

প্রার্থীদের অনলাইনে প্রচারের ব্যয়ের হিসাব প্রতি সাত দিনে একবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে। এটি প্রচারের স্বচ্ছতা ও আইনি কাঠামো মেনে চলার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নতুন বিধি

মাইকের ব্যবহার এবং শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্বাচন কমিশন নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে। আগের নিয়ম অনুযায়ী, মাইক ব্যবহার রাত আটটা পর্যন্ত ছিল, তবে নতুন বিধিমালায় দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হবে। মাইক ব্যবহারে শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবলের মধ্যে রাখতে হবে, যাতে পরিবেশের ওপর প্রভাব কম পড়ে।

পলিথিন এবং প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আনতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনী প্রচারে লিফলেট, হ্যান্ডবিল এবং ব্যানারের পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে। এটি পরিবেশ রক্ষায় একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সরকারি কর্মকর্তাদের  নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ  নিষিদ্ধ।

প্রস্তাবিত বিধিমালায় সরকারি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়েছে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এই ব্যক্তিরা কেবল ভোট দিতে পারবেন, কিন্তু প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না।

নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করলে শাস্ত্‌

নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করলে প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য ব্যক্তির ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। কোনো রাজনৈতিক দল যদি বিধি লঙ্ঘন করে, তবে তাদেরও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে।

অনলাইন প্রচারের ক্ষেত্রে ডিজিটাল সুরক্ষা আইন অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হবে। নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা মেনে চলার জন্য প্রার্থী ও দলের কাছ থেকে অঙ্গীকারপত্র নেয়া হবে, যাতে তারা শাস্তি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

নির্বাচন কমিশনের  বক্তব,

নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা সংশোধনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেছেন, “আমরা এই খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করেছি এবং কমিশনের অনুমোদন পাওয়ার পর তা কার্যকর করা হবে। আশা করছি, এটি নির্বাচনী পরিবেশ আরও সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ করে তুলবে।”

তিনি আরও বলেন, “এটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও নতুন নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে আরও কার্যকরী হবে। কমিশন আশা করে, এই পদক্ষেপগুলি নির্বাচনী পরিবেশের উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”,নির্বাচনী আচরণ বিধিমালায় এসব সংশোধন নির্বাচনী পরিবেশে স্বচ্ছতা, সুষ্ঠুতা এবং আইনানুগ শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত এই পরিবর্তনগুলি নির্বাচনী প্রচারের সুষ্ঠুতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।

ট্যাগ

সাইয়েদুল ইস্তেগফার : সর্বশ্রেষ্ঠ ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া

জনসভায় নতুন শর্ত: ৭২ ঘণ্টা আগে পুলিশের অনুমতি

প্রকাশিত হয়েছে: ০৫:৫৮:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫

নির্বাচন কমিশন (ইসি) এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা সংশোধন করতে যাচ্ছে। নতুন খসড়া অনুযায়ী, কমিশন মিছিলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে এবং জনসভা আয়োজনের জন্য পুলিশি অনুমতি নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেবে।

মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার সিদ্ধান্ত,

এখন পর্যন্ত নির্বাচনী আচরণ বিধিমালায় সব ধরনের মিছিল বা বিক্ষোভ নিষিদ্ধ ছিল। তবে, সংশোধিত খসড়ায় এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রস্তাবিত বিধিমালায় মিছিল বা বিক্ষোভ আয়োজনের ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ নিষেধাজ্ঞা রাখা হয়নি, তবে যন্ত্রচালিত যানবাহন বা মশাল ব্যবহারের অনুমতি থাকবে না।

জনসভা আয়োজনের জন্য নতুন শর্ত

জনসভা বা পথসভা আয়োজনের ক্ষেত্রে নতুন শর্ত যোগ করা হয়েছে। ৭২ ঘণ্টা আগে পুলিশের অনুমতি নিতে হবে এবং ৪৮ ঘণ্টা আগে স্থান ও সময় পুলিশকে জানাতে হবে। এই পদক্ষেপটি নির্বাচনী শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নেয়া হচ্ছে। আর পোস্টার ব্যবহারের পরিবর্তে ব্যানার ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, যেখানে সাদা-কালো কাপড়ের ব্যানার ব্যবহার করতে হবে এবং প্রার্থী বা দলের প্রধান ব্যতীত কারো ছবি ব্যবহার করা যাবে না।

অনলাইনে প্রচারের জন্য আইনি কাঠামো

প্রথমবারের মতো অনলাইনে প্রচারের জন্য আইনি কাঠামো তৈরি করতে যাচ্ছে কমিশন। প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দের আগে ভিডিও কনটেন্ট, বিজ্ঞাপন বা অন্যান্য প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করতে পারবেন, তবে তা ভোটগ্রহণ শুরুর ৪৮ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে।

প্রার্থীদের অনলাইনে প্রচারের ব্যয়ের হিসাব প্রতি সাত দিনে একবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে। এটি প্রচারের স্বচ্ছতা ও আইনি কাঠামো মেনে চলার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নতুন বিধি

মাইকের ব্যবহার এবং শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্বাচন কমিশন নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে। আগের নিয়ম অনুযায়ী, মাইক ব্যবহার রাত আটটা পর্যন্ত ছিল, তবে নতুন বিধিমালায় দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হবে। মাইক ব্যবহারে শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবলের মধ্যে রাখতে হবে, যাতে পরিবেশের ওপর প্রভাব কম পড়ে।

পলিথিন এবং প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আনতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনী প্রচারে লিফলেট, হ্যান্ডবিল এবং ব্যানারের পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে। এটি পরিবেশ রক্ষায় একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সরকারি কর্মকর্তাদের  নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ  নিষিদ্ধ।

প্রস্তাবিত বিধিমালায় সরকারি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়েছে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এই ব্যক্তিরা কেবল ভোট দিতে পারবেন, কিন্তু প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না।

নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করলে শাস্ত্‌

নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করলে প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য ব্যক্তির ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। কোনো রাজনৈতিক দল যদি বিধি লঙ্ঘন করে, তবে তাদেরও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে।

অনলাইন প্রচারের ক্ষেত্রে ডিজিটাল সুরক্ষা আইন অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হবে। নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা মেনে চলার জন্য প্রার্থী ও দলের কাছ থেকে অঙ্গীকারপত্র নেয়া হবে, যাতে তারা শাস্তি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

নির্বাচন কমিশনের  বক্তব,

নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা সংশোধনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেছেন, “আমরা এই খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করেছি এবং কমিশনের অনুমোদন পাওয়ার পর তা কার্যকর করা হবে। আশা করছি, এটি নির্বাচনী পরিবেশ আরও সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ করে তুলবে।”

তিনি আরও বলেন, “এটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও নতুন নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে আরও কার্যকরী হবে। কমিশন আশা করে, এই পদক্ষেপগুলি নির্বাচনী পরিবেশের উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”,নির্বাচনী আচরণ বিধিমালায় এসব সংশোধন নির্বাচনী পরিবেশে স্বচ্ছতা, সুষ্ঠুতা এবং আইনানুগ শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত এই পরিবর্তনগুলি নির্বাচনী প্রচারের সুষ্ঠুতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।