কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে আবারও তৈরি হয়েছে নতুন এক ইতিহাস। শনিবার (১২ এপ্রিল) সকালে মসজিদের দানবাক্স খোলার পর পাওয়া গেছে রেকর্ড ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা। এছাড়াও পাওয়া গেছে বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার।

এদিন সকাল ৭টায় দানবাক্সগুলো খোলার পর সেগুলো মসজিদের দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয় গণনার জন্য। দিনভর গণনা শেষে বিকেল সাড়ে ৫টায় কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান আনুষ্ঠানিকভাবে টাকার অঙ্কটি নিশ্চিত করেন।

দানবাক্স খোলা হলো ৪ মাস ১২ দিন পর

গতবার দানবাক্স খোলা হয়েছিল ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর, তখন রেকর্ড ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা সংগ্রহ হয়েছিল। এবারে প্রায় সাড়ে চার মাস পর খোলা হয় ৯টি লোহার দানবাক্স ও দুটি বড় ট্যাংক। এসব থেকে টাকা ভরে ২৮টি বস্তায় করে আনা হয় গণনার স্থানে।

বিশাল কর্মযজ্ঞে অংশ নেন ৪০০ জন

টাকা গণনার কাজে যুক্ত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিজাবে রহমত, মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার, রূপালী ব্যাংকের এজিএম রফিকুল ইসলাম, মসজিদ কমিটির সদস্য ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
মোট ২৮৫ জন মাদ্রাসাছাত্র, ৮০ জন ব্যাংক কর্মকর্তা, ৩৪ জন মসজিদ কমিটির সদস্য, এবং ১০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য—সবাই মিলে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এই দান গণনায় অংশ নেন।

পাগলা মসজিদ: এক আধ্যাত্মিক ইতিহাস

পাগলা মসজিদ শুধু একটি উপাসনালয় নয়—এটি একটি আস্থার কেন্দ্রবিন্দু। জনশ্রুতি আছে, বহু বছর আগে এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধক এই স্থানকে তার সাধনার জায়গা হিসেবে বেছে নেন। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সবাই তার কাছে যেতেন মানত করতে। সাধকের মৃত্যুর পর এখানেই গড়ে ওঠে বর্তমান পাগলা মসজিদ, যা পরে হয়ে ওঠে আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় এক মিলনমেলা।

সকল ধর্মের মানুষের দান

ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে মানুষ বিশ্বাস করেন, এই মসজিদে দান করলে মনের আশা পূরণ হয়। তাই এখানে দান আসে নগদ অর্থ ছাড়াও স্বর্ণ, রুপা, গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি, এমনকি বৈদেশিক মুদ্রা পর্যন্ত।
বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানতকারীদের ঢল নামে এখানে। কেউ কেউ দান করেন হাজার হাজার টাকা, কেউবা গহনাসহ আসেন মানত রাখতে।

৩০ হাজার মুসল্লির জন্য ‘ইসলামিক কমপ্লেক্স‘

পাগলা মসজিদ বর্তমানে কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিমে, নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত। মাত্র ১০ শতাংশ জমিতে গড়ে উঠলেও বর্তমানে মসজিদ কমপ্লেক্সের আয়তন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ একর ৮৮ শতাংশে।
মসজিদ কমিটি জানিয়েছে, এখানে আন্তর্জাতিক মানের ইসলামিক কমপ্লেক্স গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যার নাম হবে “পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স”। প্রাথমিকভাবে এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা, যেখানে একসঙ্গে ৩০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন।