
ঢাকা, ১৭ এপ্রিল ২০২৫:
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে অনুষ্ঠিত ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠকে এই দাবি উত্থাপন করা হয়। প্রায় ১৫ বছর পর অনুষ্ঠিত এই সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন এবং পাকিস্তানের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ।
বৈঠক শেষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, “বৈঠকে আমি পাকিস্তানের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে অমীমাংসিত বিষয়গুলো উত্থাপন করেছি। এর মধ্যে রয়েছে একাত্তরের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা, আটকেপড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, অবিভক্ত সম্পদের ন্যায্য হিস্যা এবং ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে পাঠানো আন্তর্জাতিক সাহায্যের অর্থ হস্তান্তর।”
❝ ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া ❞
এ বিষয়ে পাকিস্তানের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব জানান, তারা ভবিষ্যতে আলোচনায় থাকতে চায়। “আমি আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি। পাকিস্তান বলেছে, তারা এ বিষয়ে ‘এনগেইজড’ থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, একদিনের আলোচনায় সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়, তবে এই বৈঠকগুলো নিয়মিত হলে অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানের পথ সুগম হবে।
❝ আটকেপড়া পাকিস্তানিদের সংখ্যা ও দাবি ❞
১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৪১ জন ফিরে গেছেন। বর্তমানে ৩ লাখ ২৪ হাজার ১৪৭ জন পাকিস্তানি বাংলাদেশের ১৪ জেলায় ৭৯টি ক্যাম্পে অবস্থান করছেন বলে জানান পররাষ্ট্রসচিব। এ বিষয়ে আলোচনায় অগ্রগতি এবং আগামীর পথে এগিয়ে যাওয়ার গুরুত্বও তুলে ধরা হয়।
❝ বাংলাদেশের পাওনার হিসাব ❞
আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের কাছে ৪.৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে। এছাড়া ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে পাঠানো ২০০ মিলিয়ন ডলারের আন্তর্জাতিক সহায়তার হিস্যার বিষয়টিও উত্থাপন করা হয়েছে।
❝ অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও কানেক্টিভিটি ❞
বৈঠকে বাংলাদেশ-পাকিস্তান অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর জোর দেওয়া হয়। বাংলাদেশের পণ্যের রপ্তানি বাড়ানো, শুল্ক বাধা দূরীকরণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বন্যা মোকাবিলায় যৌথ সহযোগিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
পর্যটন ও পরিবহন সংযোগে সাম্প্রতিক সময়ে সরাসরি শিপিং রুট চালু হওয়ার পর সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালুর সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। পাকিস্তানের একটি নতুন এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে কার্যক্রম চালুর অনুমতির জন্য আবেদন করেছে বলেও জানান জসীম উদ্দিন।
❝ শিক্ষা, সংস্কৃতি ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ❞
উচ্চশিক্ষা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দুই দেশের শিল্পী, লেখক, শিক্ষাবিদ ও ক্রীড়াবিদদের সফর বিনিময় উৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রতিরক্ষা খাতে সাধারণ প্রশিক্ষণ ও কর্মকর্তা বিনিময় নিয়ে আলোচনা হলেও অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে নিশ্চিত করেন পররাষ্ট্রসচিব।
❝ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে অবস্থান ❞
আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে সার্কের পুনরুজ্জীবনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে সমর্থন এবং ওআইসি-তে মুসলিম উম্মাহর পক্ষে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।