ভবিষ্যতের স্বপ্ন ও পরিবারের দারিদ্র্য দূর করতে রাশিয়ার পথে পা বাড়িয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার যুবক মোহাম্মদ আকরাম হোসেন (২৫)। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস—রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিতে গিয়ে প্রাণ হারাতে হলো তাকে।

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে রাশিয়া থেকে আকরামের এক সহযোদ্ধা ফোন করে তার পরিবারের সদস্যদের এ মর্মান্তিক খবর জানান।

আকরাম আশুগঞ্জ উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের দিনমজুর মোরশেদ মিয়ার ছেলে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১১ মাস আগে ধারদেনা করে রাশিয়ায় পাড়ি জমান আকরাম। প্রথমে একটি চায়না কোম্পানিতে ওয়েল্ডার হিসেবে কাজ করলেও অল্প বেতনের কারণে এক পর্যায়ে দালালের মাধ্যমে রুশ সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক যোদ্ধা হিসেবে যোগ দেন তিনি।

ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়ার সময় আকরাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক ছবি পোস্ট করেছিলেন। যদিও পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে বারবার ফিরে আসার অনুরোধ করা হয়, তবুও আকরাম জানিয়ে দেন—ফেরার আর কোনো উপায় নেই।

১৩ এপ্রিল থেকে আকরামের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর ১৮ এপ্রিল তার এক সহযোদ্ধা ফোন করে জানান, ইউক্রেনের একটি মিসাইল হামলায় আকরাম নিহত হয়েছেন। ওই হামলায় আকরামের ইউনিটের আরও কয়েকজন সদস্যও প্রাণ হারান।

আকরামের মা মোবিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “ছেলের কণ্ঠ শুনি না বহুদিন, এখন তো আর শোনার সুযোগও রইল না।”

আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাফে মোহাম্মদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “পরিবারের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। মরদেহ শনাক্তের পর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আকরামের করুণ মৃত্যু যেন হাজারো স্বপ্ন দেখা যুবকের জন্য এক সতর্কবার্তা। অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার আগে বিপদের আশঙ্কাগুলো আরও ভালোভাবে বুঝে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আরও একবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এই ঘটনা।