দ্বিতীয় শহর।
একটা গলির ভেতর ভাঙাচোরা টিনের ঘরে থাকে লাইলি।
বয়স ত্রিশ ছুঁই ছুঁই, চোখে চিরকালের ক্লান্তি আর ঠোঁটে এক ধরণের অভ্যস্ত হাল ছেড়ে দেওয়া হাঁসফাঁস।
টাকার কষ্ট তার জীবনের নিত্যসঙ্গী।
ভোরে উঠে বাসাবাড়িতে কাজ, দুপুরে বাজারে দাঁড়িয়ে পুরনো কাপড় বিক্রি—
তারপর সন্ধ্যাবেলা ফিরে আসে ছোট্ট একটা মুখের কাছে, যার চোখে চেয়ে লাইলি নিজেকে "মা" বলে ভাবে।
একদিন হঠাৎ একজন আসে।
কথা কম, চোখে চশমা, মুখে সিগারেটের গন্ধ।
বলল,
“তোমার বাচ্চাটার জন্য তো তুমি কিছুই করতে পারবা না।
আমরা চাই, ভালো রাখবো। ৪৫ হাজার দিব... ভাবো।”
লাইলি ভাবে না।
ভাবার সময় তার থাকে না।
চোখের সামনে ঘোরে নতুন মোবাইলের ছবি, নুপুরের টুংটাং, আর স্বপ্নের মতো ঝিলিক দেয়া এক জোড়া নাকফুল।
পরদিন সকালে, শিশুটিকে কোলে তুলে দেয়।
সে কিছুই বোঝে না। ছোট্ট হাতটা মায়ের কাঁধে লেগে থাকে কিছুক্ষণ,
তারপর হারিয়ে যায়।
লাইলি টাকাটা হাতে পেয়ে বাজারে যায়।
ফোন কেনে, নুপুর তোলে, নাকফুল নেয়...
একটা থলে ভর্তি স্বপ্ন কিনে আনে।
শুধু একবারও পেছনে ফিরে চায় না...
মায়ের মতো চায় না।
তিন দিন পর পুলিশ আসে।
প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় মুখের সামনে,
“তুমি কীভাবে পারলে?”
লাইলি চুপ করে থাকে। চোখ জলে ভরে ওঠে।
সে বলে,
“ভুল হইছে… আমি মাও… নারীও…”
তার কণ্ঠে কাঁপন, গলায় কান্না, চোখে পানি।
কিন্তু কেউ তা বিশ্বাস করে না।
কারণ সেই কান্নায় ছিল না মাতৃত্বের গন্ধ।
ছিল না দুঃখের নির্ভরতা।
ছিল শুধু ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়।
এই শহরের বাতাস আজও জানে,
৪৫ হাজার টাকায় যে বিক্রি হয় সন্তানের ভবিষ্যৎ,
তার চোখের জল কখনো পবিত্র হয় না।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ Abdus Salam
© কপিরাইট সমাচার বিশ্ব ২০২৫ | আমাদের ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।