০৭:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ন্যায়পাল ও চুক্তি পদ্ধতিতে সংস্কারের পক্ষে বিএনপি

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠন, নারী আসন বৃদ্ধি ও সংসদ সদস্যদের স্বাধীন ভোটাধিকারসহ একাধিক বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) একমত হয়েছে। রোববার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সংসদ ভবনের এলডি হলে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, রাষ্ট্রপতির বিদ্যমান ক্ষমতার বাইরে কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে তাঁকে আরও ক্ষমতায়িত করার প্রস্তাবে তারা একমত হয়েছেন। তিনি বলেন, “নতুন আইন প্রণয়ন করে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার পরিধি বৃদ্ধি করা যেতে পারে, যেখানে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স নিশ্চিত থাকবে।”

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের বিষয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, “অর্থ বিল, সংবিধান সংশোধনী বিল, আস্থা ভোট, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিল—এই চারটি ছাড়া বাকি বিষয়ে এমপিদের নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছি আমরা।”

নারী আসনের সংখ্যা ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার বিষয়ে বিএনপি একমত হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে বর্তমান মনোনয়নভিত্তিক পদ্ধতি বহাল রাখার পক্ষেই বিএনপির মত। এই সংখ্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পরবর্তী সংসদে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন পদ্ধতি নির্ধারণের সুপারিশ করেছে দলটি।

বিএনপি প্রস্তাব করেছে, একজন ব্যক্তি পরপর দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। তবে মধ্যবর্তী সময়ে গ্যাপ থাকলে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ রাখা যেতে পারে। সালাহউদ্দিন বলেন, “আমরা অপশনটা রাখতে চাই, বাধ্যবাধকতা নয়।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, “৯০ দিনের জন্য টেম্পোরারি একটি অনির্বাচিত সরকার প্রয়োজন—এই ডকট্রিন অব নেসেসিটি আমাদের রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রমাণিত।” তিনি বলেন, “এই ব্যবস্থা ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি, আর এজন্যই আমরা ১৫ বছর আন্দোলন করেছি।”

বিএনপি উচ্চ কক্ষে ১০০ আসনের প্রস্তাবে একমত হয়েছে। তবে নির্বাচন পদ্ধতি নির্ধারণের আগে সংসদে দ্বিকক্ষীয় ব্যবস্থার সংশোধনী পাস হওয়া উচিত বলে মত দিয়েছে তারা।

দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক চুক্তি সংসদে উপস্থাপন প্রসঙ্গে বিএনপি বলেছে, এটি সুবিবেচনা করে করা উচিত। বিশেষ করে ডিফেন্স বা জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত চুক্তিগুলো ‘ক্লোজড সেশনে’ আলোচনা করাই শ্রেয়।
ন্যায়পাল নিয়োগের ক্ষেত্রে বিএনপি বিদ্যমান আইনের যুগোপযোগী সংস্কারে একমত হয়েছে।

সব সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান পদে বিরোধী দলকে বসানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বিএনপি। তবে পাবলিক আন্ডারটেকিং ও সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির মতো কিছু নির্দিষ্ট কমিটিতে বিরোধী দলের সদস্যদের চেয়ারম্যান করার প্রস্তাবে তারা একমত হয়েছে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতৃবৃন্দ  বিএনপির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন:

সালাহউদ্দিন আহমেদ (দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য)  নজরুল ইসলাম খান  ইসমাইল জবিহউল্লাহ  ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল  সাবেক সচিব আবু মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। উপস্থিত ছিলেন বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও মনির হায়দার।

 

ট্যাগ
পোস্টকারীর সকল তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চীনের সঙ্গে যৌথভাবে আঞ্চলিক শান্তি রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিল পাকিস্তান

ন্যায়পাল ও চুক্তি পদ্ধতিতে সংস্কারের পক্ষে বিএনপি

প্রকাশিত হয়েছে: ০৭:২৭:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠন, নারী আসন বৃদ্ধি ও সংসদ সদস্যদের স্বাধীন ভোটাধিকারসহ একাধিক বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) একমত হয়েছে। রোববার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সংসদ ভবনের এলডি হলে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, রাষ্ট্রপতির বিদ্যমান ক্ষমতার বাইরে কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে তাঁকে আরও ক্ষমতায়িত করার প্রস্তাবে তারা একমত হয়েছেন। তিনি বলেন, “নতুন আইন প্রণয়ন করে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার পরিধি বৃদ্ধি করা যেতে পারে, যেখানে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স নিশ্চিত থাকবে।”

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের বিষয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, “অর্থ বিল, সংবিধান সংশোধনী বিল, আস্থা ভোট, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিল—এই চারটি ছাড়া বাকি বিষয়ে এমপিদের নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছি আমরা।”

নারী আসনের সংখ্যা ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার বিষয়ে বিএনপি একমত হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে বর্তমান মনোনয়নভিত্তিক পদ্ধতি বহাল রাখার পক্ষেই বিএনপির মত। এই সংখ্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পরবর্তী সংসদে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন পদ্ধতি নির্ধারণের সুপারিশ করেছে দলটি।

বিএনপি প্রস্তাব করেছে, একজন ব্যক্তি পরপর দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। তবে মধ্যবর্তী সময়ে গ্যাপ থাকলে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ রাখা যেতে পারে। সালাহউদ্দিন বলেন, “আমরা অপশনটা রাখতে চাই, বাধ্যবাধকতা নয়।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, “৯০ দিনের জন্য টেম্পোরারি একটি অনির্বাচিত সরকার প্রয়োজন—এই ডকট্রিন অব নেসেসিটি আমাদের রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রমাণিত।” তিনি বলেন, “এই ব্যবস্থা ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি, আর এজন্যই আমরা ১৫ বছর আন্দোলন করেছি।”

বিএনপি উচ্চ কক্ষে ১০০ আসনের প্রস্তাবে একমত হয়েছে। তবে নির্বাচন পদ্ধতি নির্ধারণের আগে সংসদে দ্বিকক্ষীয় ব্যবস্থার সংশোধনী পাস হওয়া উচিত বলে মত দিয়েছে তারা।

দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক চুক্তি সংসদে উপস্থাপন প্রসঙ্গে বিএনপি বলেছে, এটি সুবিবেচনা করে করা উচিত। বিশেষ করে ডিফেন্স বা জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত চুক্তিগুলো ‘ক্লোজড সেশনে’ আলোচনা করাই শ্রেয়।
ন্যায়পাল নিয়োগের ক্ষেত্রে বিএনপি বিদ্যমান আইনের যুগোপযোগী সংস্কারে একমত হয়েছে।

সব সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান পদে বিরোধী দলকে বসানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বিএনপি। তবে পাবলিক আন্ডারটেকিং ও সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির মতো কিছু নির্দিষ্ট কমিটিতে বিরোধী দলের সদস্যদের চেয়ারম্যান করার প্রস্তাবে তারা একমত হয়েছে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতৃবৃন্দ  বিএনপির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন:

সালাহউদ্দিন আহমেদ (দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য)  নজরুল ইসলাম খান  ইসমাইল জবিহউল্লাহ  ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল  সাবেক সচিব আবু মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। উপস্থিত ছিলেন বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও মনির হায়দার।