কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর সাম্প্রতিক প্রাণঘাতী হামলা যেন এক ঝলকে দুই প্রতিবেশী পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে সুপ্ত দ্বন্দ্বকে জ্বালিয়ে দিল। ভারতে জাতিগত ও রাজনৈতিক আবেগ যখন টগবগ করছে, পাকিস্তানও তখন সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে প্রতিক্রিয়াশীল। এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ নয়, বরং কৌশলী সংলাপ ও আন্তর্জতিক উদ্যোগই হতে পারে একমাত্র সমাধান।
বৈসারণ উপত্যকার পর্যটকহত্যা নিছক সন্ত্রাস নয়, বরং এক কৌশলগত বার্তা। হামলায় দায় স্বীকার করেছে TRF, যার শিকড় পাকিস্তানের জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত বলে ভারত দাবি করছে। প্রতিক্রিয়ায় দিল্লি শুধু ভিসা বাতিল করেনি, বরং পানি, কূটনীতি ও সীমান্ত—সব পর্যায়ে আঘাত হেনেছে।
পাকিস্তানও চুপ করে থাকেনি। তারা একে "যুদ্ধ ঘোষণা" হিসেবে দেখছে, যার ফলে আকাশসীমা বন্ধ, কূটনৈতিক কর্মী বহিষ্কার এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পূর্ণভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
ভারতের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের হুমকি এবং পাকিস্তানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক। পানি নিয়ে এই প্রথমবারের মতো এত প্রকাশ্য হুমকি এসেছে। যুদ্ধের ভাষা ব্যবহার করে দুই দেশই প্রমাণ করেছে, এখনকার দ্বন্দ্ব কেবল সন্ত্রাসবিরোধী নয়, এটি একপ্রকার সার্বভৌম প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
বিশ্ব যখন ইউক্রেন-গাজা সংকটে দিশেহারা, তখন দক্ষিণ এশিয়ার এই অস্থিরতা আরও বড় জিওপলিটিক্যাল চ্যালেঞ্জ। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা-পরবর্তী ভারতীয় বিমান হামলার পর পরিস্থিতি আবারও সেই দিকেই মোড় নিচ্ছে।
দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধে কেউ জেতেনি কখনো, হার শুধু সাধারণ মানুষের। তাই রাজনৈতিক আবেগ নয়, এখন দরকার সতর্কতা, সংযম ও কূটনৈতিক চ্যানেলের পুনরায় উন্মোচন। ভারত ও পাকিস্তান যদি নিজেদের ভবিষ্যৎকে সত্যিই গুরুত্ব দেয়, তবে যুদ্ধ নয়—নতুন একটি শান্তি আলোচনার দ্বার খুলে দিতে হবে।
কাশ্মীরের রক্ত এখনও শুকায়নি, আর কূটনৈতিক ভাষা রূপ নিচ্ছে হুমকিতে। এখন সময়, এই উত্তপ্ত মাটি থেকে শান্তির পথে হাঁটার। অন্যথায়, ইতিহাস আবারও এই উপমহাদেশকে রক্ত দিয়ে মূল্য চোকাতে বাধ্য করবে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ Abdus Salam
© কপিরাইট সমাচার বিশ্ব ২০২৫ | আমাদের ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।