০৯:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

“জেলেনস্কি-ট্রাম্প বৈঠকে ঐতিহাসিক ইঙ্গিত: পুতিনের সদিচ্তা নিয়ে প্রশ্ন”

শেষকৃত্যানুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়ে ভ্যাটিকানে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্ম দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় অনুষ্ঠানের আগে প্রায় ১৫ মিনিটের একটি গোপন বৈঠকে মিলিত হন তারা, যেখানে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাবনা নিয়ে গভীর আলোচনা হয়। হোয়াইট হাউজ বৈঠকটিকে ‘খুবই ফলপ্রসূ’ বলে উল্লেখ করেছে, আর জেলেনস্কি একে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়েছেন।

বৈঠকের পর রোম ত্যাগের পথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, “চলতি সপ্তাহে কিয়েভে রাশিয়ার হামলার দৃশ্য দেখে মনে হয়েছে পুতিন হয়তো আমাকে ঘোরাচ্ছেন। না হলে বেসামরিক এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।”
ট্রাম্প আরও ইঙ্গিত দেন, রাশিয়ার সাথে শান্তি আলোচনায় ভিন্নভাবে এগোতে হতে পারে — যেমন ব্যাংকিং নিষেধাজ্ঞা আরও জোরদার করার মাধ্যমেও চাপ প্রয়োগ করা হতে পারে।

এর আগে ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ মস্কো সফর করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে বৈঠক করেন। ক্রেমলিন জানিয়েছে, ইউক্রেনের সাথে কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই আলোচনায় বসতে তারা সম্মত।
তবে ট্রাম্প এখন পুতিনের সদিচ্ছা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন, যা যুদ্ধের কূটনৈতিক সমাধানে নতুন হিসাব যোগ করছে।

বৈঠকের সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রও উপস্থিত ছিলেন। তাদের ভূমিকা ছিল দুই নেতাকে ঘনিষ্ঠ করতে সহায়তা করা। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা সামাজিক মাধ্যমে বৈঠকের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, “ঐতিহাসিক এ মুহূর্তের ব্যাখ্যায় শব্দের প্রয়োজন নেই।”

অনুষ্ঠান শেষে জেলেনস্কি ফরাসি দূতাবাসে গিয়ে ম্যাঁক্রর সাথে আলাদা বৈঠক করেন এবং পরে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে স্টারমারের সাথেও বৈঠক করেন। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েনের সাথেও তার আলোচনা হয়।

ম্যাক্রো পরে এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে লেখেন, “ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান একটি লক্ষ্য, যা আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে ভাগ করে নিয়েছি।” তিনি ইউক্রেনের ‘নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির’ প্রস্তুতির কথাও জানান।

এদিকে ইউক্রেনের অবস্থানেও নমনীয়তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। জেলেনস্কি বিবিসিকে বলেন, “পূর্ণাঙ্গ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি সবকিছু নিয়ে আলোচনার দরজা খুলে দেবে।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মার্কিন রাজনীতিতে পরিবর্তনের সম্ভাবনার সাথে সাথে কিয়েভও বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছে, যেখানে কিছু ভূখণ্ড ছাড় দিয়ে হলেও যুদ্ধ বন্ধের পথ খোঁজা হতে পারে।

এর আগে ফেব্রুয়ারিতে ওভাল অফিসে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের সময় ট্রাম্প ইউক্রেনের ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করেছিলেন এবং জেলেনস্কিকে “কার্ডহীন” বলে মন্তব্য করেছিলেন। এরপরই যুদ্ধ অবসানে কিয়েভ ভূখণ্ড ছাড়ের সম্ভাবনাকে আলোচনায় আনতে শুরু করে।

বর্তমানে বিশ্ববাসীর নজর এখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ভবিষ্যতের দিকে, যেখানে ভ্যাটিকানের শান্তির আলোচনাকে একটি সম্ভাব্য টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ট্যাগ
পোস্টকারীর সকল তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চীনের সঙ্গে যৌথভাবে আঞ্চলিক শান্তি রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিল পাকিস্তান

“জেলেনস্কি-ট্রাম্প বৈঠকে ঐতিহাসিক ইঙ্গিত: পুতিনের সদিচ্তা নিয়ে প্রশ্ন”

প্রকাশিত হয়েছে: ০৯:১৯:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

শেষকৃত্যানুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়ে ভ্যাটিকানে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্ম দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় অনুষ্ঠানের আগে প্রায় ১৫ মিনিটের একটি গোপন বৈঠকে মিলিত হন তারা, যেখানে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাবনা নিয়ে গভীর আলোচনা হয়। হোয়াইট হাউজ বৈঠকটিকে ‘খুবই ফলপ্রসূ’ বলে উল্লেখ করেছে, আর জেলেনস্কি একে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়েছেন।

বৈঠকের পর রোম ত্যাগের পথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, “চলতি সপ্তাহে কিয়েভে রাশিয়ার হামলার দৃশ্য দেখে মনে হয়েছে পুতিন হয়তো আমাকে ঘোরাচ্ছেন। না হলে বেসামরিক এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।”
ট্রাম্প আরও ইঙ্গিত দেন, রাশিয়ার সাথে শান্তি আলোচনায় ভিন্নভাবে এগোতে হতে পারে — যেমন ব্যাংকিং নিষেধাজ্ঞা আরও জোরদার করার মাধ্যমেও চাপ প্রয়োগ করা হতে পারে।

এর আগে ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ মস্কো সফর করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে বৈঠক করেন। ক্রেমলিন জানিয়েছে, ইউক্রেনের সাথে কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই আলোচনায় বসতে তারা সম্মত।
তবে ট্রাম্প এখন পুতিনের সদিচ্ছা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন, যা যুদ্ধের কূটনৈতিক সমাধানে নতুন হিসাব যোগ করছে।

বৈঠকের সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রও উপস্থিত ছিলেন। তাদের ভূমিকা ছিল দুই নেতাকে ঘনিষ্ঠ করতে সহায়তা করা। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা সামাজিক মাধ্যমে বৈঠকের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, “ঐতিহাসিক এ মুহূর্তের ব্যাখ্যায় শব্দের প্রয়োজন নেই।”

অনুষ্ঠান শেষে জেলেনস্কি ফরাসি দূতাবাসে গিয়ে ম্যাঁক্রর সাথে আলাদা বৈঠক করেন এবং পরে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে স্টারমারের সাথেও বৈঠক করেন। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েনের সাথেও তার আলোচনা হয়।

ম্যাক্রো পরে এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে লেখেন, “ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান একটি লক্ষ্য, যা আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে ভাগ করে নিয়েছি।” তিনি ইউক্রেনের ‘নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির’ প্রস্তুতির কথাও জানান।

এদিকে ইউক্রেনের অবস্থানেও নমনীয়তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। জেলেনস্কি বিবিসিকে বলেন, “পূর্ণাঙ্গ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি সবকিছু নিয়ে আলোচনার দরজা খুলে দেবে।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মার্কিন রাজনীতিতে পরিবর্তনের সম্ভাবনার সাথে সাথে কিয়েভও বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছে, যেখানে কিছু ভূখণ্ড ছাড় দিয়ে হলেও যুদ্ধ বন্ধের পথ খোঁজা হতে পারে।

এর আগে ফেব্রুয়ারিতে ওভাল অফিসে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের সময় ট্রাম্প ইউক্রেনের ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করেছিলেন এবং জেলেনস্কিকে “কার্ডহীন” বলে মন্তব্য করেছিলেন। এরপরই যুদ্ধ অবসানে কিয়েভ ভূখণ্ড ছাড়ের সম্ভাবনাকে আলোচনায় আনতে শুরু করে।

বর্তমানে বিশ্ববাসীর নজর এখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ভবিষ্যতের দিকে, যেখানে ভ্যাটিকানের শান্তির আলোচনাকে একটি সম্ভাব্য টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখা হচ্ছে।