
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে প্রথমবারের মতো সৈন্য পাঠানোর কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কিম জং উনের নির্দেশে উত্তর কোরিয়ার একটি এলিট ইউনিট “স্টর্ম কর্পস” রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে ইউক্রেন সীমান্তবর্তী কুরস্ক অঞ্চল ‘পুরোপুরি মুক্ত’ করেছে।
কেসিএনএ দাবি করেছে, এই সৈন্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে পিয়ংইয়ং ও মস্কোর মধ্যে বিদ্যমান পারস্পারিক প্রতিরক্ষা চুক্তির আওতায়। রিপোর্টে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের ‘ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করা বীর’ হিসেবে উল্লেখ করে কিম জং উনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, “তারা মাতৃভূমির সম্মান রক্ষা করছে।”
রাশিয়ার সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ উত্তর কোরিয়ান সৈন্যদের ‘বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার’ প্রশংসা করার পর এই বিবৃতি দেয় উত্তর কোরিয়া। একইসঙ্গে মস্কোও এই প্রথম প্রকাশ্যে স্বীকার করল, যুদ্ধক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরা রাশিয়াকে সহায়তা করছে।
দক্ষিণ কোরিয়া ও পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বেশ আগে থেকেই দাবি করে আসছিল যে, উত্তর কোরিয়া গত বছর থেকেই কুরস্ক অঞ্চলে সেনা পাঠিয়েছে। এখন তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করল কিম জং উনের প্রশাসন।
কেসিএনএ জানিয়েছে, এই সৈন্যদের মোতায়েন করা হয় ২০২৪ সালের অক্টোবরে, যখন কিম ও পুতিনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয় এবং একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
পশ্চিমা কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, গত তিন মাসে উত্তর কোরিয়া থেকে পাঠানো এক হাজার থেকে এগারো হাজার সেনা ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত হয়েছে। যদিও কেসিএনএ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এই সেনারা মূলত “স্টর্ম কর্পস” নামের একটি বিশেষ ইউনিটের সদস্য। তবে, সাবেক ব্রিটিশ ট্যাংক কমান্ডার কর্নেল হামিশ ডি ব্রেটন গর্ডন জানান, উত্তর কোরিয়ার সেনাদের আধুনিক যুদ্ধে প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল। “রাশিয়ান প্রশিক্ষকরা তাদের প্রশিক্ষণ দিলেও ভাষাগত ও কৌশলগত সীমাবদ্ধতায় কার্যকর সমন্বয় সম্ভব হয়নি,” বলেন তিনি।
ইউক্রেনের সামরিক কমান্ডার জেনারেল ওলেকসান্দ্র সিরস্কি জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার সেনারা যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করছে। “তারা অনেক বেশি অনুপ্রাণিত ও আগ্রাসী। সোভিয়েত যুগের কৌশল অনুসরণ করে তারা বিশাল সংখ্যায় আক্রমণ পরিচালনা করছে,” বলেন তিনি।
কেসিএনএ বলেছে, কুরস্ক মিশন শেষে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের কীভাবে পরিচালনা করা হবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। তবে, তাদের এই অংশগ্রহণ পিয়ংইয়ং ও মস্কোর সম্পর্ককে ‘রক্তে প্রমাণিত বন্ধুত্বে’ রূপ দিয়েছে বলেও মন্তব্য করে।