০২:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টেলিকম খাতে বাঁধন আলগা, ইন্টারনেট আরও দ্রুত ও সাশ্রয়ী

বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তনের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং ব্যবস্থার সংস্কার নীতিমালা-২০২৫’ এর খসড়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা জটিল, বহুস্তরভিত্তিক লাইসেন্সিং কাঠামো বিলুপ্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর বদলে আনা হচ্ছে একটি সহজ, উদ্ভাবনী ও বিনিয়োগবান্ধব লাইসেন্সিং ব্যবস্থা।

নতুন নীতিমালায় তিনটি মূল লাইসেন্স এবং দুটি এনলিস্টমেন্ট চালুর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এগুলো হলো— মোবাইল ও ফিক্সড টেলিকম সেবা, ব্যাকহল-টাওয়ার-ফাইবার অবকাঠামো এবং আন্তর্জাতিক ভয়েস ও ডেটা সংযোগ। অন্যদিকে, উপজেলা বা থানা পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা, এসএমএস অ্যাগ্রিগেটর এবং ক্ষুদ্র টেলিকম সেবাগুলো ‘এনলিস্টমেন্ট’ এর আওতায় পরিচালিত হবে।

বিলুপ্ত হচ্ছে চার স্তরের সঞ্চালন কাঠামো

আইসিএক্স, নিক্স, আইজিডব্লিউ ও আইআইজি—এই চারটি মধ্যবর্তী স্তর বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে খসড়ায়। এর ফলে ইন্টারনেট এখন সরাসরি এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে প্রবাহিত হতে পারবে, যা ইন্টারনেট সেবার মান উন্নত করবে এবং খরচ কমাবে।

লাইসেন্স ছাড়া চালানো যাবে একাধিক সেবা

টেলিকম ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (TVAS), কল সেন্টার, ভেহিকেল ট্র্যাকিং ইত্যাদি সেবাকে লাইসেন্সের আওতামুক্ত করা হয়েছে। শুধুমাত্র একটি স্বীকৃতির (এনলিস্টমেন্ট) মাধ্যমে এগুলো পরিচালনার সুযোগ থাকবে। এতে নতুন উদ্যোক্তাদের প্রবেশ আরও সহজ হবে এবং বাজারে উদ্ভাবনী সেবার প্রসার ঘটবে।

বিদেশি বিনিয়োগের দুয়ার খুলছে

প্রস্তাবিত নীতিমালায় দুইটি ক্যাটাগরির লাইসেন্সে বিদেশি মালিকানার সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। ন্যাশনাল ইন্টারনেট কমিউনিকেশন সার্ভিস প্রোভাইডার (N-ICSP) লাইসেন্সে ৭০% এবং ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট কমিউনিকেশন সার্ভিস প্রোভাইডার (I-ICSP) লাইসেন্সে ৪৯% পর্যন্ত বিদেশি মালিকানা অনুমোদনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

৭টি উদ্দেশ্য, ৩ ধাপে বাস্তবায়ন

বিটিআরসির খসড়া নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে সাতটি মূল লক্ষ্য—এর মধ্যে রয়েছে সহজ টপোলজি, প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা, সেবা সহজলভ্যতা, বিনিয়োগ আকর্ষণ ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জন। নীতিমালাটি বাস্তবায়ন হবে তিন ধাপে:

  • ২০২৫ সালে অনুমোদন ও কার্যকারিতা শুরু

  • ২০২৫-২৬ সালে নতুন লাইসেন্স দেওয়া

  • ২০২৭ সালে পুরনো লাইসেন্স মেয়াদ শেষে নতুন কাঠামোয় স্থানান্তর

বিশেষজ্ঞদের মত
টেলিযোগাযোগ বিশ্লেষকদের মতে, এ নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের টেলিকম খাতে বিনিয়োগ বাড়বে, প্রযুক্তির উন্নয়ন হবে এবং গ্রাহকরা আরও উন্নত মানের সেবা পাবেন।

একজন বিটিআরসি কর্মকর্তা বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, নতুন এ বিধান সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করবে এবং টেলিকম খাতে আধুনিকতা ও দক্ষতা আনবে।”


ট্যাগ
পোস্টকারীর সকল তথ্য

টেলিকম খাতে বাঁধন আলগা, ইন্টারনেট আরও দ্রুত ও সাশ্রয়ী

প্রকাশিত হয়েছে: ০৯:৫৯:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫

বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তনের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং ব্যবস্থার সংস্কার নীতিমালা-২০২৫’ এর খসড়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা জটিল, বহুস্তরভিত্তিক লাইসেন্সিং কাঠামো বিলুপ্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর বদলে আনা হচ্ছে একটি সহজ, উদ্ভাবনী ও বিনিয়োগবান্ধব লাইসেন্সিং ব্যবস্থা।

নতুন নীতিমালায় তিনটি মূল লাইসেন্স এবং দুটি এনলিস্টমেন্ট চালুর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এগুলো হলো— মোবাইল ও ফিক্সড টেলিকম সেবা, ব্যাকহল-টাওয়ার-ফাইবার অবকাঠামো এবং আন্তর্জাতিক ভয়েস ও ডেটা সংযোগ। অন্যদিকে, উপজেলা বা থানা পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা, এসএমএস অ্যাগ্রিগেটর এবং ক্ষুদ্র টেলিকম সেবাগুলো ‘এনলিস্টমেন্ট’ এর আওতায় পরিচালিত হবে।

বিলুপ্ত হচ্ছে চার স্তরের সঞ্চালন কাঠামো

আইসিএক্স, নিক্স, আইজিডব্লিউ ও আইআইজি—এই চারটি মধ্যবর্তী স্তর বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে খসড়ায়। এর ফলে ইন্টারনেট এখন সরাসরি এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে প্রবাহিত হতে পারবে, যা ইন্টারনেট সেবার মান উন্নত করবে এবং খরচ কমাবে।

লাইসেন্স ছাড়া চালানো যাবে একাধিক সেবা

টেলিকম ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (TVAS), কল সেন্টার, ভেহিকেল ট্র্যাকিং ইত্যাদি সেবাকে লাইসেন্সের আওতামুক্ত করা হয়েছে। শুধুমাত্র একটি স্বীকৃতির (এনলিস্টমেন্ট) মাধ্যমে এগুলো পরিচালনার সুযোগ থাকবে। এতে নতুন উদ্যোক্তাদের প্রবেশ আরও সহজ হবে এবং বাজারে উদ্ভাবনী সেবার প্রসার ঘটবে।

বিদেশি বিনিয়োগের দুয়ার খুলছে

প্রস্তাবিত নীতিমালায় দুইটি ক্যাটাগরির লাইসেন্সে বিদেশি মালিকানার সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। ন্যাশনাল ইন্টারনেট কমিউনিকেশন সার্ভিস প্রোভাইডার (N-ICSP) লাইসেন্সে ৭০% এবং ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট কমিউনিকেশন সার্ভিস প্রোভাইডার (I-ICSP) লাইসেন্সে ৪৯% পর্যন্ত বিদেশি মালিকানা অনুমোদনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

৭টি উদ্দেশ্য, ৩ ধাপে বাস্তবায়ন

বিটিআরসির খসড়া নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে সাতটি মূল লক্ষ্য—এর মধ্যে রয়েছে সহজ টপোলজি, প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা, সেবা সহজলভ্যতা, বিনিয়োগ আকর্ষণ ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জন। নীতিমালাটি বাস্তবায়ন হবে তিন ধাপে:

  • ২০২৫ সালে অনুমোদন ও কার্যকারিতা শুরু

  • ২০২৫-২৬ সালে নতুন লাইসেন্স দেওয়া

  • ২০২৭ সালে পুরনো লাইসেন্স মেয়াদ শেষে নতুন কাঠামোয় স্থানান্তর

বিশেষজ্ঞদের মত
টেলিযোগাযোগ বিশ্লেষকদের মতে, এ নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের টেলিকম খাতে বিনিয়োগ বাড়বে, প্রযুক্তির উন্নয়ন হবে এবং গ্রাহকরা আরও উন্নত মানের সেবা পাবেন।

একজন বিটিআরসি কর্মকর্তা বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, নতুন এ বিধান সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করবে এবং টেলিকম খাতে আধুনিকতা ও দক্ষতা আনবে।”