সৌদি আরব সম্প্রতি তার দীর্ঘদিনের তেল উৎপাদন হ্রাসের নীতির মোড় ঘোরানোর আভাস দিচ্ছে। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, রিয়াদ ইতোমধ্যে তার মিত্র ও শিল্প বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। এটি বাস্তবায়িত হলে ২০১৯ সালের পর প্রথমবারের মতো OPEC+ জোটের কৌশলগত রূপরেখায় বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতে দীর্ঘদিন উৎপাদন কমানোর পর এই নীতিগত রদবদল বিশ্ব তেল বাজার, OPEC+ জোটের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য এবং সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কৌশল—সবকিছুর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
২০১৯ সাল থেকে OPEC ও তার সহযোগী দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত OPEC+ জোট বিশ্ব বাজারে তেলের দামে ভারসাম্য আনার জন্য যৌথভাবে উৎপাদন হ্রাসের নীতি গ্রহণ করে। মহামারির সময় বিশ্বব্যাপী চাহিদা কমে যাওয়ায় এই হ্রাসের পরিমাণ আরও বাড়ানো হয়। বর্তমানে প্রতিদিন ৫০ লক্ষ ব্যারেল উৎপাদন কমানো হচ্ছে, যার মধ্যে এককভাবে সৌদি আরব ২০ লক্ষ ব্যারেলের বেশি কমিয়েছে।
তবে জোটের অন্যান্য সদস্যদের উৎপাদন কোটা না মানা এবং নিজস্ব স্বার্থে কাজ করার প্রবণতা রিয়াদকে ক্রমেই হতাশ করেছে। ফলে সৌদি আরব এখন উৎপাদন বাড়িয়ে বাজারে তার রাজস্ব পুনরুদ্ধারের পথে হাঁটার কথা ভাবছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) অনুসারে, সৌদি আরবের বাজেট ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রতিটি ব্যারেল তেলের দর দরকার কমপক্ষে ৯০ মার্কিন ডলার। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দর এই সীমার নিচে অবস্থান করছে। অন্যদিকে, জোটের আরেক প্রধান সদস্য রাশিয়া ৭০ ডলারের নিচেও লাভজনকভাবে তেল বিক্রি করতে সক্ষম।
এই আর্থিক বৈষম্য সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ প্রকল্পগুলো—বিশেষ করে "ভিশন ২০৩০" এর মতো উচ্চাভিলাষী প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য রিয়াদকে বিকল্প অর্থনৈতিক কৌশল নিতে বাধ্য করছে। সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, সৌদি কর্মকর্তারা এমনকি বড় প্রকল্প স্থগিত করা এবং খরচ কমানোর সম্ভাবনাও বিবেচনা করছেন।
যদি সৌদি আরব একতরফাভাবে উৎপাদন বাড়ায়, তাহলে এটি জোটের ঐক্যে বড় ধাক্কা হতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া ইতোমধ্যেই উৎপাদন বৃদ্ধি করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। ফলে জোটের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হতে পারে। জোটের অন্যান্য সদস্য যেমন কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত বা ইরাক নিজেদের স্বার্থে ভিন্ন অবস্থান নিতে পারে।
বিশ্বজুড়ে তেলের দাম যদি সৌদির পদক্ষেপে কমে যায়, তাহলে তা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য স্বস্তি নিয়ে আসতে পারে। তবে একই সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রতিযোগিতা হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে, যা পরিবেশ ও জলবায়ু নীতির গতিপথকে প্রভাবিত করতে পারে।
সৌদি আরবের নীতিগত এই পরিবর্তন শুধু একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত নয়—এটি তেলনির্ভর বৈশ্বিক অর্থনীতির ভবিষ্যৎকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে পারে। রিয়াদের এই কৌশল OPEC+ জোটের কাঠামো, বিশ্ববাজারে দামের গতি এবং ভূরাজনৈতিক প্রভাব প্রতিফলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিশ্ব এখন তাকিয়ে, এই মোড় ঘোরার পথ কতটা গভীরে যায়।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ Abdus Salam
© কপিরাইট সমাচার বিশ্ব ২০২৫ | আমাদের ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।