
আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতি সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শনিবার রাতে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের এক জরুরি বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
উপদেষ্টা পরিষদের মুখপাত্র ও সদস্য ড. আসিফ নজরুল জানান, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতাদের বিচার চলমান থাকায় এবং দেশের সার্বিক নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও আন্দোলনকারী JULY কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।”
সরকারের ঘোষণায় জানানো হয়, এই নিষেধাজ্ঞা দেশের প্রচলিত সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী কার্যকর হবে এবং আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম—ভৌত এবং ডিজিটাল উভয় মাধ্যমেই—বৈধতা হারাবে। নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত।
বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীও অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী, এখন থেকে ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকেও শাস্তির আওতায় আনতে পারবে।
গত কয়েকদিন ধরে সদ্য গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং অন্যান্য সংগঠন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল। তাদের অভিযোগ, গত বছরের জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনের সময় সংঘটিত সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড এবং রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের পেছনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল।
বিশেষ করে, সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সম্প্রতি থাইল্যান্ডে গমনের পর এনসিপি নতুন করে কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং আন্দোলন আরও জোরদার হয়।
বৈঠকে আরও জানানো হয়, ২০২৪ সালের আন্দোলনের ভিত্তিতে তৈরি “জুলাই ঘোষণাপত্র” আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করা হবে। এই ঘোষণাপত্রকে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রীয় নীতি ও প্রশাসনিক কাঠামোর ভিত্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সরকার জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত বিস্তারিত পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী, সাক্ষী এবং আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাড়তি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক নতুন অধ্যায় সূচিত হলো। নিষেধাজ্ঞার রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এর প্রভাব এবং আন্তর্জাতিক মহলের অবস্থান এখন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।