
দক্ষিণ এশিয়ায় আবারও উত্তেজনার ঢেউ। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ সম্প্রতি এক কঠোর বার্তা দিয়েছেন দেশের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসীদের উদ্দেশে। তাঁর ভাষায়, “তাদের পরিণতি হবে ভারতের বিমানবাহিনীর মতো।” শনিবার (১৭ মে) সিয়ালকোটে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দেওয়া এই বক্তব্য এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
পাকিস্তান বিগত দুই দশক ধরে নিজ দেশে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে। খাইবার পাখতুনখোয়া, বেলুচিস্তান ও ট্রাইবাল এরিয়াগুলিতে তালিবানপন্থী, বিচ্ছিন্নতাবাদী ও বিদেশি মদদপুষ্ট সংগঠনগুলোর বিস্তার দেশটির জন্য ভয়াবহ নিরাপত্তা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এমন বক্তব্য স্পষ্টতই বার্তা বহন করে—এই যুদ্ধ শুধু ‘অভ্যন্তরীণ’ নয়, বরং এতে ‘বাহ্যিক শক্তি’ও জড়িত, বিশেষ করে ভারত।
খাজা আসিফের অভিযোগ, “ভারত পাকিস্তানে সন্ত্রাস ছড়ানোর পেছনে সক্রিয়ভাবে জড়িত।” এই বক্তব্য কেবল উত্তেজনা বাড়ানোর হুঁশিয়ারিই নয়, বরং এটি একটি কূটনৈতিক যুদ্ধের সূচনাও হতে পারে। ভারত পূর্বেও এমন অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের এই প্রকাশ্য ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের অভিযোগ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে।
বক্তব্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী যে পরিণতির কথা বলছেন, তা সম্ভবত ২০১৯ সালের বালাকোট এয়ারস্ট্রাইক এবং পাকিস্তানের পাল্টা প্রতিক্রিয়ার দিকে ইঙ্গিত করে। তখন ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানের বালাকোটে জইশ-ই-মুহাম্মদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায়। জবাবে পাকিস্তান নিজেদের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশকারী দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে নামানোর দাবি করে। সেই ঘটনার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান এখনো নিজেদের ‘জয়’ হিসেবে তুলে ধরতে চায়, যা অভ্যন্তরীণ মনোবল বাড়ানোর একটি কৌশলও বটে।
খাজা আসিফের বক্তৃতা শুধু প্রতিরক্ষা বিষয়ক হুঁশিয়ারি নয়, বরং তা একটি বৃহৎ রাজনৈতিক বার্তার অংশ। তিনি বলেছেন, “আগে জাতির মধ্যে ভাঙন ছিল, কিন্তু এখন সবাই ঐক্যবদ্ধ।” বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এ ধরনের ভাষ্য অভ্যন্তরীণ ঐক্য গঠনের চেষ্টা হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে। একইসাথে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বের প্রশংসা করে সেনাবাহিনী ও বেসামরিক সরকারের মধ্যকার ঐক্যের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এই বক্তব্য দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাসকে আরও গভীর করতে পারে। যেখানে বিশ্ব সম্প্রদায় চাইছে কূটনৈতিক সংলাপ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, সেখানে দুই দেশের নেতৃবৃন্দের এমন যুদ্ধংদেহী ভাষা নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফের হুঁশিয়ারি কেবল সন্ত্রাসীদের প্রতি নয়, বরং ভারতের দিকেও এক শক্ত বার্তা। এটি স্পষ্টতই সামরিক দৃঢ়তা প্রদর্শন ও অভ্যন্তরীণ সংহতির প্রচেষ্টা, তবে এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। এখন সময় প্রয়োজন কূটনৈতিক সংযম, কারণ উত্তেজনার এই আগুন যে কারও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।