অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় প্রায় ৮০ দিন পর যৎসামান্য ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। সোমবার (১৯ মে) গাজায় শিশুখাদ্য ও ত্রাণসামগ্রী বহনকারী মাত্র ৯টি ট্রাক প্রবেশ করেছে। অথচ উপত্যকাটিতে বসবাসকারী প্রায় ১৯ লাখ মানুষ চরম খাদ্য, ওষুধ ও চিকিৎসাসেবার সংকটে দিন পার করছেন।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম আর্মি রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন আইডিএফ-এর সরকারি কার্যক্রম সমন্বয় বিভাগের প্রধান ঘাসান এলিয়ান। তিনি জানান, “গাড়িগুলো প্রবেশের আগে আমরা ভালোভাবে পরীক্ষা করেছি। এরপর সেগুলো গাজার আন্তর্জাতিক সংস্থার গুদামে যাবে, সেখান থেকে জাতিসংঘ ও রেডক্রসের তত্ত্বাবধানে বিতরণ হবে।”
স্বাভাবিক সময়েই গাজার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ আন্তর্জাতিক ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি অভিযান শুরু হওয়ার পর ত্রাণের ওপর নির্ভরতা আরও বেড়েছে। কিন্তু ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ প্রবেশকে প্রায় পুরোপুরি অনিয়মিত করে ফেলে। তেল আবিবের যুক্তি—ত্রাণসামগ্রী হামাসের হাতে পড়ে তারা আরও শক্তিশালী হতে পারে।
গাজায় গোলার আঘাতে যত মানুষ নিহত হয়েছেন, ততটাই বা তার চেয়েও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন খাদ্য, পানি, ওষুধ ও চিকিৎসার অভাবে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত গাজায় মৃত্যু হয়েছে লক্ষাধিক মানুষের, যাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর শুরু হয় ইসরায়েলি প্রতিশোধ অভিযান। টানা ১৫ মাস পর কিছু আন্তর্জাতিক চাপে ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেও তা ছিল অস্থায়ী। মাত্র ২ মাসের মাথায়, ১৮ মার্চ থেকে আইডিএফ আবারও দ্বিতীয় দফায় গাজায় হামলা শুরু করে।
এই দ্বিতীয় দফা অভিযানে গত ২ মাসেই নিহত হয়েছেন ২ হাজার ৯৮৫ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন ৮ হাজার ১৭৩ জন। পুরো যুদ্ধকালীন সময়ের হিসেবে গাজায় নিহত হয়েছেন ৫৩ হাজার ১১৯ জন এবং আহত ১ লাখ ২০ হাজার ২১৪ জন, যার মধ্যে ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।
গেল ১ মার্চ থেকে ইসরায়েল পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাকের প্রবেশ। ৮০ দিনের পর আবারও সোমবার ৯টি ট্রাক প্রবেশ করলেও তা চরম মানবিক সংকট লাঘবে একেবারেই অপ্রতুল বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থা।
প্রকাশক ও সম্পাদক
© কপিরাইট সমাচার বিশ্ব ২০২৫ | আমাদের ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।