
৭ অক্টোবর ২০২৩-এ হামাসের আক্রমণের পর ইসরায়েল যে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করে, তা এতদিন পশ্চিমা মিত্রদের সমর্থন পেয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সে সমর্থন টালমাটাল হয়ে পড়ছে।
সম্প্রতি ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং কানাডা গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের তীব্র সমালোচনা করে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে, যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে—”গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সম্প্রসারণের আমরা ঘোর বিরোধিতা করি।”
এই তিন দেশের মতে, গাজার মানবিক পরিস্থিতি এখন “অসহনীয়”। তারা ইসরায়েলকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, ৭ অক্টোবরের ‘জঘন্য’ হামলার পরে তারা আত্মরক্ষার অধিকারে ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়েছিল, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি সেই অবস্থানের সঙ্গে আর সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
২৩ মার্চ গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ১৫ জন প্যারামেডিক ও ত্রাণকর্মী নিহত হন।
এই ঘটনাকে অনেকে একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বলছেন। নিহতদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুর আগে মোবাইল ক্যামেরায় পুরো ঘটনার ভিডিও ধারণ করেছিলেন।
ভিডিওতে দেখা গেছে, ইসরায়েলি সেনারা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত ও আলোকিত অ্যাম্বুলেন্স এবং মেডিকেল কনভয় লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে গুলি চালায়—এমনকি বুলেটের দাগ ঢাকতে গাড়িগুলো বালু দিয়ে ঢেকে ফেলার চেষ্টাও করা হয়।
ইসরায়েল দাবি করেছিল, এই কনভয়গুলো তাদের বাহিনীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। কিন্তু ভিডিও ফুটেজ ও পরবর্তীকালে পাওয়া মোবাইল ফোনের তথ্য সে দাবি খণ্ডন করে।
এই ঘটনার পর ইউরোপীয় দেশগুলোতে রাজনৈতিক চাপ ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে। বহু মাস ধরে চলা বিক্ষোভ, পশ্চিম তীরেও ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি অভিযানের বিরোধিতা, সব মিলিয়ে নেতানিয়াহুর সরকারের উপর চাপ তীব্রতর হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সমালোচনা খারিজ করে দিয়ে বলেন, “লন্ডন, অটোয়া ও প্যারিস সন্ত্রাসের পুরস্কার দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতের হামলাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।”
তিনি দাবি করেন, যুদ্ধ বন্ধ হতে পারে কেবল তখনই—যদি হামাস অস্ত্র ফেলে, জিম্মিদের মুক্তি দেয় এবং গাজা বেসামরিকীকরণে সম্মত হয়।
তবে নেতানিয়াহুর সীমিত ত্রাণ প্রবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েও দেশটির অভ্যন্তরে বিতর্ক চলছে। নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলেছেন, এতে হামাস উপকৃত হবে এবং জিম্মিরা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—এই বিবৃতির পরে কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব?
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “যদি ইসরায়েল নতুন সামরিক আক্রমণ বন্ধ না করে এবং মানবিক সহায়তার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা না তোলে, তাহলে আমরা আরও শক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাব।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রতিক্রিয়ার মধ্যে অন্যতম হতে পারে—ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।
ফ্রান্স ইতোমধ্যে বিষয়টি বিবেচনা করছে এবং আগামী জুনে নিউ ইয়র্কে সৌদি আরবের সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজিত একটি কনফারেন্সে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে পারে।
যুক্তরাজ্যও ফ্রান্সের সঙ্গে আলোচনায় রয়েছে।
ইসরায়েল অবশ্য বলছে, এর ফলে “হামাসকে জিতিয়ে দেওয়া হবে”।
কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রতীকী শক্তি কখনও কখনও বাস্তবনীতিকে হার মানায়। আর গাজার ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে উঠে আসা ১৫টি ত্রাণকর্মীর লাশ যেন সেই প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।