০৬:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কাশ্মির সংঘাতের পর ভারত-পাকিস্তানের শান্তির বার্তা: সেনা প্রত্যাহার চূড়ান্ত

ভারত ও পাকিস্তান—দুটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশী রাষ্ট্র, যাদের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনাপূর্ণ। কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে একাধিকবার উভয় দেশের মধ্যে যুদ্ধ, সীমান্ত সংঘর্ষ ও রাজনৈতিক বিবাদ ঘটেছে। সম্প্রতি কাশ্মিরে পর্যটকদের ওপর এক সন্ত্রাসী হামলার জেরে আবারও সীমান্ত উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। তবে এ উত্তেজনার মাঝেও যে সাময়িক শান্তি ও সংযমের পথ উন্মোচিত হয়েছে, সেটাই বর্তমান প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয়।

গত মাসে ভারত-শাসিত কাশ্মিরে এক ভয়াবহ হামলায় বেশ কয়েকজন পর্যটক নিহত হন। এই ঘটনার জন্য ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে। এর প্রতিক্রিয়ায় শুরু হয় চারদিনব্যাপী গোলাগুলি, ড্রোন হামলা, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং বিমান অভিযানে পরস্পরের জবাবদিহিতা। এতে অন্তত ৭০ জনের বেশি নিহত হন বলে ধারণা করা হয়। আবারও সীমান্ত রক্তাক্ত হয়।

এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আকস্মিকভাবে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন, যা তাৎক্ষণিকভাবে সংঘর্ষ থামাতে ভূমিকা রাখে। তার এই মধ্যস্থতা দুই দেশের মাঝে অস্ত্রবিরতি কার্যকর করতে সহায়ক হয়।

পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, চলতি মে মাসের শেষের দিকে উভয় দেশ অতিরিক্ত সেনা ও অস্ত্র ধাপে ধাপে প্রত্যাহার করে সংঘর্ষ-পূর্ব অবস্থানে ফিরবে। ভারতীয় সেনাবাহিনীও একই বার্তা দিয়েছে।

যদিও শুরুতে ১০ দিনের মধ্যে সব কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনা ছিল, বাস্তবে কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে। ফলে প্রক্রিয়াটি কিছুটা বিলম্বিত হলেও, এটি উভয় দেশের পক্ষ থেকে শান্তির দিকে এক ধাপ এগিয়ে আসার লক্ষণ বলে ধরে নেওয়া যায়।

কাশ্মির নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্বের ইতিহাস বহু পুরনো। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্ত হওয়ার পর থেকে এ অঞ্চলটি দুটি দেশের মাঝখানে একটি জ্বলন্ত বিরোধপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে রয়ে গেছে। উভয় দেশই পুরো কাশ্মিরকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে। এটি শুধু দ্বিপাক্ষিক নয়, বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতির জটিল এক সমীকরণ।

এই প্রেক্ষাপটে বর্তমান সৈন্য প্রত্যাহার প্রক্রিয়া এক অর্থে আশাবাদের বার্তা বহন করে, বিশেষত যখন তা সংঘাতের উত্তপ্ত পরিপ্রেক্ষিতে আসে।

সৈন্য প্রত্যাহার ও সংঘর্ষ থামিয়ে দেওয়া কেবল একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা। যদি কাশ্মির সমস্যার মূল রাজনৈতিক মীমাংসা না হয়, তবে এ ধরনের সংঘাত ভবিষ্যতেও ফিরে আসতে পারে। তাই এখন প্রয়োজন—

দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছানো,

সীমান্তে আস্থা গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ,

তৃতীয় পক্ষের অস্থায়ী মধ্যস্থতার বদলে স্থায়ী কূটনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা।

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও জটিল কূটনৈতিক বাস্তবতা। সাম্প্রতিক সংঘর্ষ এবং তার পরবর্তী সময়ে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে শান্তি ও সংযমের একটি সম্ভাবনাময় সূচনা হিসেবে দেখা যেতে পারে। তবে কেবল সেনা প্রত্যাহার নয়, প্রয়োজন পারস্পরিক আস্থা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং আন্তর্জাতিক শান্তির প্রতি দায়বদ্ধতা। তবেই এই ভূখণ্ডে একটি স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।

 

ট্যাগ

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

কাশ্মির সংঘাতের পর ভারত-পাকিস্তানের শান্তির বার্তা: সেনা প্রত্যাহার চূড়ান্ত

প্রকাশিত হয়েছে: ০৬:৩২:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

ভারত ও পাকিস্তান—দুটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশী রাষ্ট্র, যাদের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনাপূর্ণ। কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে একাধিকবার উভয় দেশের মধ্যে যুদ্ধ, সীমান্ত সংঘর্ষ ও রাজনৈতিক বিবাদ ঘটেছে। সম্প্রতি কাশ্মিরে পর্যটকদের ওপর এক সন্ত্রাসী হামলার জেরে আবারও সীমান্ত উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। তবে এ উত্তেজনার মাঝেও যে সাময়িক শান্তি ও সংযমের পথ উন্মোচিত হয়েছে, সেটাই বর্তমান প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয়।

গত মাসে ভারত-শাসিত কাশ্মিরে এক ভয়াবহ হামলায় বেশ কয়েকজন পর্যটক নিহত হন। এই ঘটনার জন্য ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে। এর প্রতিক্রিয়ায় শুরু হয় চারদিনব্যাপী গোলাগুলি, ড্রোন হামলা, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং বিমান অভিযানে পরস্পরের জবাবদিহিতা। এতে অন্তত ৭০ জনের বেশি নিহত হন বলে ধারণা করা হয়। আবারও সীমান্ত রক্তাক্ত হয়।

এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আকস্মিকভাবে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন, যা তাৎক্ষণিকভাবে সংঘর্ষ থামাতে ভূমিকা রাখে। তার এই মধ্যস্থতা দুই দেশের মাঝে অস্ত্রবিরতি কার্যকর করতে সহায়ক হয়।

পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, চলতি মে মাসের শেষের দিকে উভয় দেশ অতিরিক্ত সেনা ও অস্ত্র ধাপে ধাপে প্রত্যাহার করে সংঘর্ষ-পূর্ব অবস্থানে ফিরবে। ভারতীয় সেনাবাহিনীও একই বার্তা দিয়েছে।

যদিও শুরুতে ১০ দিনের মধ্যে সব কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনা ছিল, বাস্তবে কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে। ফলে প্রক্রিয়াটি কিছুটা বিলম্বিত হলেও, এটি উভয় দেশের পক্ষ থেকে শান্তির দিকে এক ধাপ এগিয়ে আসার লক্ষণ বলে ধরে নেওয়া যায়।

কাশ্মির নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্বের ইতিহাস বহু পুরনো। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্ত হওয়ার পর থেকে এ অঞ্চলটি দুটি দেশের মাঝখানে একটি জ্বলন্ত বিরোধপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে রয়ে গেছে। উভয় দেশই পুরো কাশ্মিরকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে। এটি শুধু দ্বিপাক্ষিক নয়, বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতির জটিল এক সমীকরণ।

এই প্রেক্ষাপটে বর্তমান সৈন্য প্রত্যাহার প্রক্রিয়া এক অর্থে আশাবাদের বার্তা বহন করে, বিশেষত যখন তা সংঘাতের উত্তপ্ত পরিপ্রেক্ষিতে আসে।

সৈন্য প্রত্যাহার ও সংঘর্ষ থামিয়ে দেওয়া কেবল একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা। যদি কাশ্মির সমস্যার মূল রাজনৈতিক মীমাংসা না হয়, তবে এ ধরনের সংঘাত ভবিষ্যতেও ফিরে আসতে পারে। তাই এখন প্রয়োজন—

দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছানো,

সীমান্তে আস্থা গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ,

তৃতীয় পক্ষের অস্থায়ী মধ্যস্থতার বদলে স্থায়ী কূটনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা।

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও জটিল কূটনৈতিক বাস্তবতা। সাম্প্রতিক সংঘর্ষ এবং তার পরবর্তী সময়ে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে শান্তি ও সংযমের একটি সম্ভাবনাময় সূচনা হিসেবে দেখা যেতে পারে। তবে কেবল সেনা প্রত্যাহার নয়, প্রয়োজন পারস্পরিক আস্থা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং আন্তর্জাতিক শান্তির প্রতি দায়বদ্ধতা। তবেই এই ভূখণ্ডে একটি স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।