
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক স্টেট সেক্রেটারি স্টাইন রেনাটে হাহেইমের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের নরওয়েজিয়ান প্রতিনিধিদল।
মঙ্গলবার (২০ মে) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে নরওয়ের ঢাকাস্থ দূতাবাসের সিনিয়র উপদেষ্টা গানহিল্ড এরিকসেন, ক্রিস্টিন লুন্ডেন এবং রাষ্ট্রদূত আরাল্ড গুলব্রাডসেন উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে জলবায়ু সংকট মোকাবিলা, নবায়নযোগ্য শক্তি, বন সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়নসহ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গভীর আলোচনা হয়। নরওয়েজিয়ান প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের উচ্চাভিলাষী নবায়নযোগ্য শক্তি নীতির প্রশংসা করে।
রিজওয়ানা হাসান জানান, জলবায়ু তহবিলের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা, লবণাক্ততা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য সুপেয় পানি ও অভিযোজন প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।
বন ও নদী সংরক্ষণ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা দেশের নদী ও বনাঞ্চল রক্ষায় বদ্ধপরিকর। জলবায়ু তহবিলের একটি বড় অংশ এই খাতেই ব্যয় করা হচ্ছে। ভূমি পুনরুদ্ধার ও বনায়নের মাধ্যমে প্রকৃতির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনাই আমাদের লক্ষ্য।” এছাড়া, কৃষকদের জন্য ক্ষুদ্র কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতির কথাও তুলে ধরা হয়।
জাহাজ ভাঙা শিল্পে মানবাধিকার ও পরিবেশগত সমস্যা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, “এই শিল্পে শ্রমিকদের নিরাপত্তা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ দূষণের সমস্যা এখনো প্রকট। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সংস্কার ছাড়া একে সবুজ শিল্প বলা যাবে না।” এ বিষয়ে নরওয়ের প্রতিনিধিরা যৌথ গবেষণা ও নীতিগত সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
নরওয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব ও নবায়নযোগ্য শক্তিভিত্তিক প্রকল্পে বিনিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও দুর্নীতি হ্রাসের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন রিজওয়ানা হাসান।
তিনি আরও বলেন, “জলবায়ু সংকটে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার হলো দুর্বল জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা। নদী ও বন রক্ষায় আমরা কাজ করছি, কিন্তু জাহাজ ভাঙা শিল্পের মতো স্পর্শকাতর ক্ষেত্রে পরিবেশ ও মানবাধিকারের প্রশ্নে কোনো আপস নয়।”
নরওয়ের স্টেট সেক্রেটারি স্টাইন রেনাটে হাহেইম বলেন, “নরওয়ে বাংলাদেশের জলবায়ু অভিযোজন ও নবায়নযোগ্য শক্তি খাতের অগ্রগতিতে গভীর সমর্থন জানায়। আমরা টেকসই উন্নয়নে যৌথভাবে কাজ করতে আগ্রহী।”
বৈঠকে উভয় পক্ষ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, বন সংরক্ষণ ও সবুজ শিল্পের প্রসারে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।