১১:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চীনের অস্ত্র দিয়ে পাকিস্তানের সাফল্য, বিশ্ব বাজারে চীনের উত্থান

চলতি মে মাসের শুরুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চারদিনের সামরিক উত্তেজনা এবং হামলা-পাল্টা হামলার পর যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। দুই পক্ষই নিজেদের বিজয় দাবি করলেও, এই সংঘাতে সবচেয়ে বড় লাভবান হয়েছে তৃতীয় পক্ষ—চীনের প্রতিরক্ষা শিল্প।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক বিশ্লেষণে জানিয়েছে, পাকিস্তান এই সংঘাতে চীনের সহায়তায় তৈরি অত্যাধুনিক জে-১০সি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতের বিরুদ্ধে বেশ কিছু বড়সড় সাফল্য দাবি করেছে। বিপরীতে ভারত ফরাসি ‘রাফাল’ ও রাশিয়ান প্রযুক্তিনির্ভর যুদ্ধবিমান ব্যবহার করলেও, অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিরোধে পিছিয়ে পড়েছে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।

ঘটনার সূত্রপাত গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর। এরপর ভারত ৭ মে পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিন্দুর’ চালায়। পাল্টা জবাবে পাকিস্তান সীমান্তে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও জেএফ-১৭ এবং জে-১০ যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালায়।

পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের জে-১০ যুদ্ধবিমান ভারতীয় বিমানবাহিনীর রাফালসহ ছয়টি বিমান ভূপাতিত করেছে। যদিও ভারত সরকার এই দাবির সরাসরি জবাব দেয়নি। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো ভারতের ভাটিন্ডা ও কাশ্মির অঞ্চলে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর দিলেও নয়াদিল্লি তা অস্বীকার করেনি বা নিশ্চিতও করেনি।

চীনের সেনাবাহিনীর সাবেক কর্নেল ঝোউ বো বলেছেন, “এই সংঘর্ষ চীনের অস্ত্রশিল্পের জন্য একপ্রকার বিজ্ঞাপন হয়ে গেছে।”
চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট কোম্পানির তৈরি জে-১০সি যুদ্ধবিমান বাস্তব যুদ্ধে সফলভাবে ব্যবহার হওয়ায় কোম্পানির শেয়ার ৪০% পর্যন্ত বেড়ে গেছে।

লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক ওয়াল্টার ল্যাডউইগ জানান, যদিও চীনের প্রযুক্তি রাফালকে সম্পূর্ণ পরাস্ত করেছে কিনা তা এখনও অস্পষ্ট, কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে তার উপস্থিতিই আন্তর্জাতিক অস্ত্রবাজারে প্রভাব ফেলেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান-চীন ঘনিষ্ঠ সামরিক সহযোগিতা ভারতকে চমকে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলোর কূটনৈতিক চাপে সংঘাত বন্ধ হলেও, এই ঘটনার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে নতুন ভারসাম্য তৈরি হয়েছে।

চীন দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে অস্ত্র বিক্রি করে আসছে। কিন্তু এবারই প্রথম তাদের অস্ত্র এত বড় পরিসরে বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সংঘাত ভারতের জন্য সতর্কবার্তা। কারণ, প্রতিপক্ষ শুধু পাকিস্তান নয়—তার পেছনে আছে চীনের আধুনিক প্রযুক্তির শক্তি।

ট্যাগ
জনপ্রিয় সংবাদ

চীনের অস্ত্র দিয়ে পাকিস্তানের সাফল্য, বিশ্ব বাজারে চীনের উত্থান

প্রকাশিত হয়েছে: ০২:১২:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

চলতি মে মাসের শুরুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চারদিনের সামরিক উত্তেজনা এবং হামলা-পাল্টা হামলার পর যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। দুই পক্ষই নিজেদের বিজয় দাবি করলেও, এই সংঘাতে সবচেয়ে বড় লাভবান হয়েছে তৃতীয় পক্ষ—চীনের প্রতিরক্ষা শিল্প।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক বিশ্লেষণে জানিয়েছে, পাকিস্তান এই সংঘাতে চীনের সহায়তায় তৈরি অত্যাধুনিক জে-১০সি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতের বিরুদ্ধে বেশ কিছু বড়সড় সাফল্য দাবি করেছে। বিপরীতে ভারত ফরাসি ‘রাফাল’ ও রাশিয়ান প্রযুক্তিনির্ভর যুদ্ধবিমান ব্যবহার করলেও, অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিরোধে পিছিয়ে পড়েছে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।

ঘটনার সূত্রপাত গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর। এরপর ভারত ৭ মে পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিন্দুর’ চালায়। পাল্টা জবাবে পাকিস্তান সীমান্তে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও জেএফ-১৭ এবং জে-১০ যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালায়।

পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের জে-১০ যুদ্ধবিমান ভারতীয় বিমানবাহিনীর রাফালসহ ছয়টি বিমান ভূপাতিত করেছে। যদিও ভারত সরকার এই দাবির সরাসরি জবাব দেয়নি। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো ভারতের ভাটিন্ডা ও কাশ্মির অঞ্চলে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর দিলেও নয়াদিল্লি তা অস্বীকার করেনি বা নিশ্চিতও করেনি।

চীনের সেনাবাহিনীর সাবেক কর্নেল ঝোউ বো বলেছেন, “এই সংঘর্ষ চীনের অস্ত্রশিল্পের জন্য একপ্রকার বিজ্ঞাপন হয়ে গেছে।”
চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট কোম্পানির তৈরি জে-১০সি যুদ্ধবিমান বাস্তব যুদ্ধে সফলভাবে ব্যবহার হওয়ায় কোম্পানির শেয়ার ৪০% পর্যন্ত বেড়ে গেছে।

লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক ওয়াল্টার ল্যাডউইগ জানান, যদিও চীনের প্রযুক্তি রাফালকে সম্পূর্ণ পরাস্ত করেছে কিনা তা এখনও অস্পষ্ট, কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে তার উপস্থিতিই আন্তর্জাতিক অস্ত্রবাজারে প্রভাব ফেলেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান-চীন ঘনিষ্ঠ সামরিক সহযোগিতা ভারতকে চমকে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলোর কূটনৈতিক চাপে সংঘাত বন্ধ হলেও, এই ঘটনার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে নতুন ভারসাম্য তৈরি হয়েছে।

চীন দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে অস্ত্র বিক্রি করে আসছে। কিন্তু এবারই প্রথম তাদের অস্ত্র এত বড় পরিসরে বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সংঘাত ভারতের জন্য সতর্কবার্তা। কারণ, প্রতিপক্ষ শুধু পাকিস্তান নয়—তার পেছনে আছে চীনের আধুনিক প্রযুক্তির শক্তি।