০৬:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

“শাসক হয়েও সাধারণের বন্ধু: রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অতুলনীয় বিনয়”

ইতিহাসের পাতায় এমন কোনো ব্যক্তিত্ব খুঁজে পাওয়া ভার, যিনি একাধারে ছিলেন মহান রাষ্ট্রনায়ক, সেনাপতি, বিচারক, শিক্ষক, পিতা, স্বামী—আবার একইসাথে ছিলেন এতটাই বিনয়ী ও নম্র যে, সাধারণ মানুষ তাঁর সামনে নিজের অস্তিত্ব ভুলে যেত। তিনি ছিলেন মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ—আখেরী নবী ও বিশ্বনবী, যাঁর চরিত্র সম্পর্কে আল্লাহ স্বয়ং বলেন,
“وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٍ”
অর্থ: “নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।”

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় ছিল বিনয়ের দীপ্ত উদাহরণ। নেতৃত্বের সর্বোচ্চ শিখরে থেকেও তিনি কখনো গর্ব করেননি। উঁচু আসনে বসে কারো সঙ্গে কথা বলেননি, বরং মাটিতে বসতেন, মাটিতে খেতেন, সাধারণ লোকদের মতো চলাফেরা করতেন। এমনকি তাঁর বসার জায়গা আলাদা করে চেনা যেত না—তিনি ছিলেন ‘জনতার একজন’।

রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজের কাজ নিজেই করতেন। জামা সেলাই, জুতা মেরামত, বাজার থেকে খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ—এসব করে তিনি প্রমাণ করতেন, সম্মান কাজের দ্বারা নয়, চরিত্রের দ্বারা নির্ধারিত হয়।

সহীহ বুখারীতে এসেছে, সাহাবীগণ বলেন,
তিনি আমাদের সাথে এমন মিশতেন যেন তিনি আমাদেরই একজন। কখনো তাঁকে কোনো রকম গর্ব করতে দেখা যায়নি।
(সহীহ বুখারী)

একবার এক দরিদ্র মহিলা রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে কিছু কথা বলব।” তিনি বললেন, “তুমি যেখানেই চাও, আমি তোমার কথা শুনব।” অতঃপর রাস্তার এক কোণায় দাঁড়িয়ে তিনি তাঁর কথা শুনলেন, কাউকে তাড়িয়ে দেননি, বিরক্ত হননি।

দাস ও দাসীদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করতেন, যেন তারা পরিবারেরই সদস্য। কোনো গৃহকর্মীর ভুলে রেগে যেতেন না, বরং তাকে ক্ষমা করে দিতেন।

তিনি সকল শ্রেণির মানুষের সঙ্গে মিশতেন—গরীব, এতিম, দুঃস্থ, বেদুইন—কারোর প্রতি তাঁর আচরণে অহংকারের ছায়াও পড়ত না। শিশুরাও তাঁর কাছে এসে খেলত, তিনি তাদের কোলে তুলে নিতেন। গৃহপালিত প্রাণির খোঁজ রাখা, অসুস্থ সাহাবীর সেবা করা, ভিনধর্মীদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করা—এ সবই ছিল তাঁর দৈনন্দিন জীবনের অংশ।

মক্কা বিজয়ের দিন, যখন হাজারো লোক তাঁর পদতলে আত্মসমর্পণ করছিল, তখন তাঁর মাথা ছিল এতটা নত যে, চিবুক উটের পিঠ ছুঁয়ে যাচ্ছিল। তিনি ঘোষণা করেছিলেন,
আজ কারো প্রতি প্রতিশোধ নেই। তোমরা সবাই মুক্ত।
(সীরাত ইবন হিশাম)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলতেন—
যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বিনয় অবলম্বন করে, আল্লাহ তাকে মর্যাদায় উন্নীত করেন।
(মুসলিম: ২৫৮৮)

তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের শিখিয়ে যায়—আসল শ্রেষ্ঠত্ব লুকিয়ে আছে বিনয়ের গভীরতায়, অহংকারের উচ্চতায় নয়।

আজকের সমাজ যখন অহংকার, বৈষম্য ও আত্মপ্রচারে ডুবে যাচ্ছে, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চরিত্র আমাদের জন্য এক আলোকবর্তিকা। তিনি আমাদের দেখিয়েছেন—বিনয় কেবল একটি গুণ নয়, বরং তা একটি নেতৃত্বের শৈলী, যা হৃদয় জয় করে, সমাজ বদলায়।

❓ “রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিনয়ের এই দিকটি আজকের সমাজে কতটা প্রয়োজনীয় বলে আপনি মনে করেন?”—কমেন্টে জানান।

ট্যাগ

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

“শাসক হয়েও সাধারণের বন্ধু: রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অতুলনীয় বিনয়”

প্রকাশিত হয়েছে: ১০:১৬:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

ইতিহাসের পাতায় এমন কোনো ব্যক্তিত্ব খুঁজে পাওয়া ভার, যিনি একাধারে ছিলেন মহান রাষ্ট্রনায়ক, সেনাপতি, বিচারক, শিক্ষক, পিতা, স্বামী—আবার একইসাথে ছিলেন এতটাই বিনয়ী ও নম্র যে, সাধারণ মানুষ তাঁর সামনে নিজের অস্তিত্ব ভুলে যেত। তিনি ছিলেন মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ—আখেরী নবী ও বিশ্বনবী, যাঁর চরিত্র সম্পর্কে আল্লাহ স্বয়ং বলেন,
“وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٍ”
অর্থ: “নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।”

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় ছিল বিনয়ের দীপ্ত উদাহরণ। নেতৃত্বের সর্বোচ্চ শিখরে থেকেও তিনি কখনো গর্ব করেননি। উঁচু আসনে বসে কারো সঙ্গে কথা বলেননি, বরং মাটিতে বসতেন, মাটিতে খেতেন, সাধারণ লোকদের মতো চলাফেরা করতেন। এমনকি তাঁর বসার জায়গা আলাদা করে চেনা যেত না—তিনি ছিলেন ‘জনতার একজন’।

রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজের কাজ নিজেই করতেন। জামা সেলাই, জুতা মেরামত, বাজার থেকে খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ—এসব করে তিনি প্রমাণ করতেন, সম্মান কাজের দ্বারা নয়, চরিত্রের দ্বারা নির্ধারিত হয়।

সহীহ বুখারীতে এসেছে, সাহাবীগণ বলেন,
তিনি আমাদের সাথে এমন মিশতেন যেন তিনি আমাদেরই একজন। কখনো তাঁকে কোনো রকম গর্ব করতে দেখা যায়নি।
(সহীহ বুখারী)

একবার এক দরিদ্র মহিলা রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে কিছু কথা বলব।” তিনি বললেন, “তুমি যেখানেই চাও, আমি তোমার কথা শুনব।” অতঃপর রাস্তার এক কোণায় দাঁড়িয়ে তিনি তাঁর কথা শুনলেন, কাউকে তাড়িয়ে দেননি, বিরক্ত হননি।

দাস ও দাসীদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করতেন, যেন তারা পরিবারেরই সদস্য। কোনো গৃহকর্মীর ভুলে রেগে যেতেন না, বরং তাকে ক্ষমা করে দিতেন।

তিনি সকল শ্রেণির মানুষের সঙ্গে মিশতেন—গরীব, এতিম, দুঃস্থ, বেদুইন—কারোর প্রতি তাঁর আচরণে অহংকারের ছায়াও পড়ত না। শিশুরাও তাঁর কাছে এসে খেলত, তিনি তাদের কোলে তুলে নিতেন। গৃহপালিত প্রাণির খোঁজ রাখা, অসুস্থ সাহাবীর সেবা করা, ভিনধর্মীদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করা—এ সবই ছিল তাঁর দৈনন্দিন জীবনের অংশ।

মক্কা বিজয়ের দিন, যখন হাজারো লোক তাঁর পদতলে আত্মসমর্পণ করছিল, তখন তাঁর মাথা ছিল এতটা নত যে, চিবুক উটের পিঠ ছুঁয়ে যাচ্ছিল। তিনি ঘোষণা করেছিলেন,
আজ কারো প্রতি প্রতিশোধ নেই। তোমরা সবাই মুক্ত।
(সীরাত ইবন হিশাম)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলতেন—
যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বিনয় অবলম্বন করে, আল্লাহ তাকে মর্যাদায় উন্নীত করেন।
(মুসলিম: ২৫৮৮)

তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের শিখিয়ে যায়—আসল শ্রেষ্ঠত্ব লুকিয়ে আছে বিনয়ের গভীরতায়, অহংকারের উচ্চতায় নয়।

আজকের সমাজ যখন অহংকার, বৈষম্য ও আত্মপ্রচারে ডুবে যাচ্ছে, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চরিত্র আমাদের জন্য এক আলোকবর্তিকা। তিনি আমাদের দেখিয়েছেন—বিনয় কেবল একটি গুণ নয়, বরং তা একটি নেতৃত্বের শৈলী, যা হৃদয় জয় করে, সমাজ বদলায়।

❓ “রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিনয়ের এই দিকটি আজকের সমাজে কতটা প্রয়োজনীয় বলে আপনি মনে করেন?”—কমেন্টে জানান।