রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চরিত্রের অন্যতম উজ্জ্বল দিক ছিল তাঁর অতুলনীয় দয়াশীলতা ও মমত্ববোধ। তিনি ছিলেন এক walking mercy—চলমান রহমত। তাঁর দয়ার পরিধি শুধু মানুষ নয়, প্রাণিজগৎ ও পরিবেশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

👶 শিশুদের প্রতি দয়া:
তিনি শিশুদের কোলে তুলে নিতেন, চুমু দিতেন, কাঁধে চড়িয়ে খেলতেন। একবার তিনি বলেন—
“যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (আবু দাউদ)

🧓 বৃদ্ধ ও দুর্বলদের প্রতি সম্মান:
তিনি বলেন—
“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান করে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে সম্মানিত করবেন।” (তিরমিযী)

🐦 প্রাণিকুলের প্রতিও দয়া:
একবার সাহাবীগণ একটি পাখির বাচ্চা নিয়ে এলে মা পাখিটি তাদের চারপাশে উড়তে থাকে। নবীজি বললেন,
“তোমরা এই মা পাখিটির সন্তান কেড়ে নিয়ে তার উপর জুলুম করছো কেন? ফেরত দাও।”

📖 আল-কুরআনে ইরশাদ:
“وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ”
(সূরা আল-আম্বিয়া ২১:১০৭)
অর্থ: “আমি আপনাকে সমগ্র জগতবাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।”

🕋 এক অনন্য ঘটনা:
এক বেদুঈন (গভীর মরুরবাসী, যাদের মাঝে মানবিক আবেগ কম হতো) নবীজি (ছাঃ)-কে দেখল তিনি শিশুদের কোলে নিচ্ছেন, চুমু দিচ্ছেন। বেদুঈন বিস্ময়ভরে বলল, “আমরা তো কখনো আমাদের সন্তানদের আদর করি না!”
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন:
“إذا نزع الله من قلبك الرحمة، فماذا أملك لك؟”
অর্থ: “আল্লাহ যদি তোমার অন্তর থেকে দয়া উঠিয়ে নেন, তাহলে আমি কী করতে পারি?”

🔎 এই ঘটনা শুধু নবীজির কোমল হৃদয়কেই প্রকাশ করে না, বরং আমাদের শেখায়—দয়া শুধু একটি আচরণ নয়, বরং এটি একজন ঈমানদারের পরিচয়।

🌿 উপসংহার:
আজকের সমাজে যখন নির্মমতা, হিংসা ও কঠোরতা ছড়িয়ে পড়েছে, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর এই গুণাবলি আমাদের জন্য অনুসরণীয় পথনির্দেশ। তাঁর মতো হৃদয়বান হওয়াই মুসলিমের আসল পরিচয়।