
আফ্রিকার সবচেয়ে নবীন রাষ্ট্র দক্ষিণ সুদানে প্রেসিডেন্ট সালভা কির ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়েক মাচারের সমর্থকদের মধ্যে সামরিক সংঘর্ষে কমপক্ষে ৭৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৭৮ জন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, চলমান সংঘাতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে হাজার হাজার মানুষ নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। শুধু এপ্রিল মাসেই নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ।
২০১১ সালে সুদানের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর দক্ষিণ সুদান এক দশকের মধ্যে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ ও সহিংসতায় জর্জরিত হয়ে ওঠে। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চলা গৃহযুদ্ধে প্রায় ৪ লাখ মানুষ প্রাণ হারান এবং ৪০ লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন হন। ২০১৮ সালের একটি শান্তিচুক্তির মাধ্যমে অস্থায়ীভাবে সংঘর্ষ বন্ধ হলেও চলতি বছর আবারও উত্তেজনা বাড়তে থাকে।
গত মার্চে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাচারকে গ্রেপ্তারের পর পরিস্থিতি নতুন করে অস্থির হয়ে ওঠে। প্রেসিডেন্ট কিরের নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ সুদান পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (SSPDF) এবং মাচারের সুদান পিপলস লিবারেশন আর্মি ইন অপজিশন (SPLA-IO)–এর মধ্যে জংগলেই রাজ্য ও নীল অঞ্চলে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়।
জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়, দক্ষিণ সুদানের সেনাবাহিনী আকাশ, নৌ ও স্থলপথে বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। এসব হামলায় বেসামরিক আবাসস্থল ও চিকিৎসা কেন্দ্রও আক্রান্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক চিকিৎসাসেবী সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (MSF)–এর একটি স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভলকার তুর্ক।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান জানান, “এই সহিংসতায় কেবল প্রাণহানিই ঘটছে না, বরং হাজার হাজার পরিবার বাস্তুহারা হয়ে অমানবিক পরিস্থিতিতে জীবনযাপন করছে। দ্রুত রাজনৈতিক সমাধান না হলে এই সংকট আরও ঘনীভূত হবে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ সুদানে চলমান সংঘর্ষ যদি দ্রুত থামানো না যায়, তবে অঞ্চলজুড়ে নতুন করে একটি বড় শরণার্থী সংকট দেখা দিতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ সংকটে কার্যকর হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।