০৮:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হার্ভার্ড বনাম হোয়াইট হাউস: বিদেশি শিক্ষার্থীদের ঘিরে তীব্র দ্বন্দ্ব

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীন ও খ্যাতনামা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষমতা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। একইসঙ্গে হার্ভার্ডকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরকারি একাধিক শর্ত পূরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে জানান, আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে হার্ভার্ডের “স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম” বাতিল করা হয়েছে। তিনি লিখেন, “এটি দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য সতর্কবার্তা হওয়া উচিত।”

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এই পদক্ষেপকে ‘বেআইনি ও প্রতিশোধমূলক’ হিসেবে অভিহিত করেছে। এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি জানায়, “আমাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য এক বিশ্বজনীন, স্বাগতপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা অটল। প্রশাসনের এ পদক্ষেপ শুধু আমাদের একাডেমিক মিশনকেই বাধাগ্রস্ত করছে না, বরং আন্তর্জাতিক ছাত্রদের ভবিষ্যতকেও অনিশ্চিত করে তুলেছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে হার্ভার্ডে ১৪০টিরও বেশি দেশ থেকে আসা প্রায় ৬,৭০০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত, যা মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ২৭ শতাংশ।

এই ঘোষণার পরপরই হার্ভার্ড ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষার্থী সারাহ ডেভিস বলেন, “আমাদের অনেকেরই গ্র্যাজুয়েশন মাত্র কয়েকদিন পর। এখন এই সিদ্ধান্ত আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিচ্ছে।”

সুইডিশ শিক্ষার্থী লিও গেরডেন বলেন, “আমরা যারা হার্ভার্ডে আসতে পেরেছিলাম, তাদের জন্য এটা ছিল এক স্বপ্নের দিন। এখন হঠাৎ আমাদের আইনি মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে—এটা অমানবিক।”

ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, হার্ভার্ডে ইহুদি-বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে তারা তদন্ত শুরু করেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়টিকে নিয়োগ, ভর্তি ও শিক্ষাদান প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে বলেছে। প্রশাসনের দাবির মধ্যে রয়েছে গত পাঁচ বছরে ভর্তি হওয়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সব তথ্য, ভিডিও, অডিও এবং বিক্ষোভে জড়িত শিক্ষার্থীদের রেকর্ড হস্তান্তরের মতো দাবি।

এদিকে হার্ভার্ড বলছে, এসব দাবি তাদের একাডেমিক স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ এবং প্রশাসনের ‘বুদ্ধিবৃত্তিক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা’।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ এরইমধ্যে আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার এক ফেডারেল বিচারক বৃহস্পতিবার এক মামলায় এই নীতির বাস্তবায়নে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি শুধু হার্ভার্ড নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ এবং বৈশ্বিক শিক্ষার্থীদের জন্য গভীর উদ্বেগের ইঙ্গিত বহন করে।


ট্যাগ

হার্ভার্ড বনাম হোয়াইট হাউস: বিদেশি শিক্ষার্থীদের ঘিরে তীব্র দ্বন্দ্ব

প্রকাশিত হয়েছে: ১০:৪৫:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীন ও খ্যাতনামা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষমতা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। একইসঙ্গে হার্ভার্ডকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরকারি একাধিক শর্ত পূরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে জানান, আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে হার্ভার্ডের “স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম” বাতিল করা হয়েছে। তিনি লিখেন, “এটি দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য সতর্কবার্তা হওয়া উচিত।”

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এই পদক্ষেপকে ‘বেআইনি ও প্রতিশোধমূলক’ হিসেবে অভিহিত করেছে। এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি জানায়, “আমাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য এক বিশ্বজনীন, স্বাগতপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা অটল। প্রশাসনের এ পদক্ষেপ শুধু আমাদের একাডেমিক মিশনকেই বাধাগ্রস্ত করছে না, বরং আন্তর্জাতিক ছাত্রদের ভবিষ্যতকেও অনিশ্চিত করে তুলেছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে হার্ভার্ডে ১৪০টিরও বেশি দেশ থেকে আসা প্রায় ৬,৭০০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত, যা মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ২৭ শতাংশ।

এই ঘোষণার পরপরই হার্ভার্ড ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষার্থী সারাহ ডেভিস বলেন, “আমাদের অনেকেরই গ্র্যাজুয়েশন মাত্র কয়েকদিন পর। এখন এই সিদ্ধান্ত আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিচ্ছে।”

সুইডিশ শিক্ষার্থী লিও গেরডেন বলেন, “আমরা যারা হার্ভার্ডে আসতে পেরেছিলাম, তাদের জন্য এটা ছিল এক স্বপ্নের দিন। এখন হঠাৎ আমাদের আইনি মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে—এটা অমানবিক।”

ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, হার্ভার্ডে ইহুদি-বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে তারা তদন্ত শুরু করেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়টিকে নিয়োগ, ভর্তি ও শিক্ষাদান প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে বলেছে। প্রশাসনের দাবির মধ্যে রয়েছে গত পাঁচ বছরে ভর্তি হওয়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সব তথ্য, ভিডিও, অডিও এবং বিক্ষোভে জড়িত শিক্ষার্থীদের রেকর্ড হস্তান্তরের মতো দাবি।

এদিকে হার্ভার্ড বলছে, এসব দাবি তাদের একাডেমিক স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ এবং প্রশাসনের ‘বুদ্ধিবৃত্তিক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা’।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ এরইমধ্যে আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার এক ফেডারেল বিচারক বৃহস্পতিবার এক মামলায় এই নীতির বাস্তবায়নে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি শুধু হার্ভার্ড নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ এবং বৈশ্বিক শিক্ষার্থীদের জন্য গভীর উদ্বেগের ইঙ্গিত বহন করে।