১০:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অনাহারে ধুঁকছে গাজা, ত্রাণ আটকে দিচ্ছে ইসরায়েলি কট্টরপন্থীরা

  • নাতাশা মুন্নি
  • প্রকাশিত হয়েছে: ০৮:৪৭:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
  • ১০৬ শেয়ার

গাজার বিরুদ্ধে নতুন অবরোধ কৌশল: ত্রাণ থামাতে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের রাস্তা অবরোধ
গাজা যখন ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখোমুখি, তখন আন্তর্জাতিক সহায়তা পৌঁছানোর পথও প্রতিনিয়ত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এবার এই বাধার মূল উৎস—ইসরায়েলি কট্টরপন্থী বসতি স্থাপনকারীরা, যারা সরাসরি ত্রাণবাহী ট্রাক থামিয়ে দিচ্ছে, রাস্তা অবরোধ করছে এবং কখনো কখনো সহায়তা নষ্ট করে দিচ্ছে।

গাজার প্রধান প্রবেশপথ কারেম শালোম ও রাফাহ সীমান্তে এমন অবরোধ প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে চলে। বসতি স্থাপনকারীদের এসব পদক্ষেপ এখন আর বিচ্ছিন্ন বিক্ষোভ নয়, বরং একটি সুসংগঠিত ও রাজনৈতিকভাবে মদতপুষ্ট কার্যক্রমের রূপ নিচ্ছে।

‘ত্রাণ নয়, প্রতিশোধ চাই’—বসতি স্থাপনকারীদের স্লোগান

বসতি স্থাপনকারীদের অনেকেই দাবি করছেন, গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানো মানেই “শত্রুকে সাহায্য করা”। তাঁরা চান গাজাবাসীদের সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন করে ‘চূড়ান্ত সমাধান’ বাস্তবায়ন করতে। এই মনোভাব কেবল সহিংস নয়, বরং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

রাষ্ট্রীয় নীরবতা ও নৈতিক ব্যর্থতা

সবচেয়ে আশঙ্কাজনক দিক হলো—ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী এই বসতি স্থাপনকারীদের প্রতিহত করছে না। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ ও সেনাবাহিনী তাদের উপস্থিতি সত্ত্বেও হস্তক্ষেপ করছে না। বিশ্লেষকদের মতে, এই নীরবতা আসলে একটি মৌন অনুমোদনেরই নামান্তর।

মানবিক সহায়তা: যুদ্ধের কৌশল না করুণা?

জাতিসংঘ বারবার বলছে, খাদ্য, ওষুধ ও পানি আটকানো যুদ্ধাপরাধের শামিল। গাজায় প্রতি ঘণ্টায় যেভাবে শিশু ও বৃদ্ধরা প্রাণ হারাচ্ছেন, সেখানে প্রতিটি ত্রাণ ট্রাক একটি জীবনরক্ষাকারী অস্ত্র।

অথচ সেই অস্ত্রকেই এখন ভয়ংকর রাজনীতির শিকার করা হচ্ছে।

গাজাবাসীদের জন্য দ্বিগুণ অবরোধ

ইসরায়েলি সামরিক অবরোধের সঙ্গে বসতি স্থাপনকারীদের জনবিচ্ছিন্ন অবরোধ মিলিয়ে গাজাবাসী এখন দ্বিগুণ মানবিক সংকটে পড়েছে। শিশুদের অপুষ্টি, সংক্রামক রোগ এবং পানির সংকট চরমে পৌঁছেছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ইতোমধ্যেই গাজায় ‘অনাহার পরিস্থিতি’ ঘোষণা করেছে।

বিশ্ব নীরব, গাজা পোড়ছে

গাজার এই ক্রমবর্ধমান সংকটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া এখনও দুর্বল। কিছু বিবৃতি, কিছু উদ্বেগ, কিন্তু কার্যকর কোনো চাপ নেই। বসতি স্থাপনকারীরা এটিই চায়—বিশ্ব নীরব থাকুক, আর তারা তাদের ‘মিশন’ চালিয়ে যাক।

উঠে আসে একটি প্রশ্ন—যখন রাষ্ট্র, গোষ্ঠী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সবাই নীরব থাকে, তখন মানবতা কোথায় দাঁড়িয়ে থাকে?

 

ট্যাগ

সাইয়েদুল ইস্তেগফার : সর্বশ্রেষ্ঠ ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া

অনাহারে ধুঁকছে গাজা, ত্রাণ আটকে দিচ্ছে ইসরায়েলি কট্টরপন্থীরা

প্রকাশিত হয়েছে: ০৮:৪৭:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫

গাজার বিরুদ্ধে নতুন অবরোধ কৌশল: ত্রাণ থামাতে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের রাস্তা অবরোধ
গাজা যখন ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখোমুখি, তখন আন্তর্জাতিক সহায়তা পৌঁছানোর পথও প্রতিনিয়ত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এবার এই বাধার মূল উৎস—ইসরায়েলি কট্টরপন্থী বসতি স্থাপনকারীরা, যারা সরাসরি ত্রাণবাহী ট্রাক থামিয়ে দিচ্ছে, রাস্তা অবরোধ করছে এবং কখনো কখনো সহায়তা নষ্ট করে দিচ্ছে।

গাজার প্রধান প্রবেশপথ কারেম শালোম ও রাফাহ সীমান্তে এমন অবরোধ প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে চলে। বসতি স্থাপনকারীদের এসব পদক্ষেপ এখন আর বিচ্ছিন্ন বিক্ষোভ নয়, বরং একটি সুসংগঠিত ও রাজনৈতিকভাবে মদতপুষ্ট কার্যক্রমের রূপ নিচ্ছে।

‘ত্রাণ নয়, প্রতিশোধ চাই’—বসতি স্থাপনকারীদের স্লোগান

বসতি স্থাপনকারীদের অনেকেই দাবি করছেন, গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানো মানেই “শত্রুকে সাহায্য করা”। তাঁরা চান গাজাবাসীদের সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন করে ‘চূড়ান্ত সমাধান’ বাস্তবায়ন করতে। এই মনোভাব কেবল সহিংস নয়, বরং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

রাষ্ট্রীয় নীরবতা ও নৈতিক ব্যর্থতা

সবচেয়ে আশঙ্কাজনক দিক হলো—ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী এই বসতি স্থাপনকারীদের প্রতিহত করছে না। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ ও সেনাবাহিনী তাদের উপস্থিতি সত্ত্বেও হস্তক্ষেপ করছে না। বিশ্লেষকদের মতে, এই নীরবতা আসলে একটি মৌন অনুমোদনেরই নামান্তর।

মানবিক সহায়তা: যুদ্ধের কৌশল না করুণা?

জাতিসংঘ বারবার বলছে, খাদ্য, ওষুধ ও পানি আটকানো যুদ্ধাপরাধের শামিল। গাজায় প্রতি ঘণ্টায় যেভাবে শিশু ও বৃদ্ধরা প্রাণ হারাচ্ছেন, সেখানে প্রতিটি ত্রাণ ট্রাক একটি জীবনরক্ষাকারী অস্ত্র।

অথচ সেই অস্ত্রকেই এখন ভয়ংকর রাজনীতির শিকার করা হচ্ছে।

গাজাবাসীদের জন্য দ্বিগুণ অবরোধ

ইসরায়েলি সামরিক অবরোধের সঙ্গে বসতি স্থাপনকারীদের জনবিচ্ছিন্ন অবরোধ মিলিয়ে গাজাবাসী এখন দ্বিগুণ মানবিক সংকটে পড়েছে। শিশুদের অপুষ্টি, সংক্রামক রোগ এবং পানির সংকট চরমে পৌঁছেছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ইতোমধ্যেই গাজায় ‘অনাহার পরিস্থিতি’ ঘোষণা করেছে।

বিশ্ব নীরব, গাজা পোড়ছে

গাজার এই ক্রমবর্ধমান সংকটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া এখনও দুর্বল। কিছু বিবৃতি, কিছু উদ্বেগ, কিন্তু কার্যকর কোনো চাপ নেই। বসতি স্থাপনকারীরা এটিই চায়—বিশ্ব নীরব থাকুক, আর তারা তাদের ‘মিশন’ চালিয়ে যাক।

উঠে আসে একটি প্রশ্ন—যখন রাষ্ট্র, গোষ্ঠী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সবাই নীরব থাকে, তখন মানবতা কোথায় দাঁড়িয়ে থাকে?