১১:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তি শুল্ক, বাংলাদেশ তুলা ও তেল কিনে সমাধান চায়

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে, পাল্টা কৌশল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকেই তুলা ও জ্বালানি আমদানি বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা। এই প্রস্তাব ব্যবহার করে ওয়াশিংটনের সঙ্গে শুল্ক বিষয়ে আলোচনার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ। এমন তথ্য জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) জাপানে আয়োজিত নিক্কেই ফোরামের এক ফাঁকে দেশটির শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. ইউনূস বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেহেতু বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চান, তাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা ও জ্বালানি বেশি করে আমদানির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে আমাদের দুই দেশের বাণিজ্য ভারসাম্য স্থাপন হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে শুল্ক ছাড় পাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়বে।”

তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ প্রচুর পরিমাণে তুলা আমদানি করে মধ্য এশিয়া ও ভারত থেকে। কিন্তু এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা কেনা শুরু করলে বাণিজ্য ঘাটতি কমবে এবং মার্কিন কৃষিখাত উপকৃত হবে। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩৬১ মিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি করেছে, যা দেশটির মোট তুলা আমদানির ১২.৫ শতাংশ। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৬.৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যেখানে আমদানি হয়েছে মাত্র ২.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।

জ্বালানির ক্ষেত্রেও মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে আমদানির নতুন উৎস হিসেবে ভাবা হচ্ছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনার নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, “শুল্ক ইস্যুটিকে আমরা হুমকি হিসেবে নয়, বরং সুযোগ হিসেবে দেখছি।”

এদিকে ড. ইউনূস জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের তুলা উৎপাদকদের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, যা মার্কিন প্রশাসনে বাংলাদেশের পক্ষে রাজনৈতিক প্রভাব সৃষ্টি করছে।

পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে উদ্যোগ

সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস দাবি করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশে থাকা লুটপাটের ১১ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, “এই অর্থ উদ্ধার করে দুটি বিশেষ ফান্ড গঠন করা হবে, যেখান থেকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে অর্থায়ন এবং দরিদ্রদের উদ্যোক্তা বানাতে সহায়তা দেওয়া হবে।”

পদত্যাগ গুঞ্জন নিয়ে বক্তব্য

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে ড. ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়িয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, “আমি বাংলাদেশে এ প্রশ্নের উত্তর দিইনি। জাপানে এ নিয়ে কিছু বললে, সেটা আমার জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।”

 

ট্যাগ
জনপ্রিয় সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তি শুল্ক, বাংলাদেশ তুলা ও তেল কিনে সমাধান চায়

প্রকাশিত হয়েছে: ০৯:৩৪:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে, পাল্টা কৌশল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকেই তুলা ও জ্বালানি আমদানি বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা। এই প্রস্তাব ব্যবহার করে ওয়াশিংটনের সঙ্গে শুল্ক বিষয়ে আলোচনার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ। এমন তথ্য জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) জাপানে আয়োজিত নিক্কেই ফোরামের এক ফাঁকে দেশটির শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. ইউনূস বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেহেতু বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চান, তাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা ও জ্বালানি বেশি করে আমদানির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে আমাদের দুই দেশের বাণিজ্য ভারসাম্য স্থাপন হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে শুল্ক ছাড় পাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়বে।”

তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ প্রচুর পরিমাণে তুলা আমদানি করে মধ্য এশিয়া ও ভারত থেকে। কিন্তু এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা কেনা শুরু করলে বাণিজ্য ঘাটতি কমবে এবং মার্কিন কৃষিখাত উপকৃত হবে। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩৬১ মিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি করেছে, যা দেশটির মোট তুলা আমদানির ১২.৫ শতাংশ। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৬.৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যেখানে আমদানি হয়েছে মাত্র ২.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।

জ্বালানির ক্ষেত্রেও মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে আমদানির নতুন উৎস হিসেবে ভাবা হচ্ছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনার নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, “শুল্ক ইস্যুটিকে আমরা হুমকি হিসেবে নয়, বরং সুযোগ হিসেবে দেখছি।”

এদিকে ড. ইউনূস জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের তুলা উৎপাদকদের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, যা মার্কিন প্রশাসনে বাংলাদেশের পক্ষে রাজনৈতিক প্রভাব সৃষ্টি করছে।

পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে উদ্যোগ

সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস দাবি করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশে থাকা লুটপাটের ১১ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, “এই অর্থ উদ্ধার করে দুটি বিশেষ ফান্ড গঠন করা হবে, যেখান থেকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে অর্থায়ন এবং দরিদ্রদের উদ্যোক্তা বানাতে সহায়তা দেওয়া হবে।”

পদত্যাগ গুঞ্জন নিয়ে বক্তব্য

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে ড. ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়িয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, “আমি বাংলাদেশে এ প্রশ্নের উত্তর দিইনি। জাপানে এ নিয়ে কিছু বললে, সেটা আমার জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।”