মানব জীবনে ভুল ও পাপ অবধারিত। কিন্তু সেই ভুলের পরে যদি অনুশোচনা জাগে, যদি হৃদয় কাঁদে এবং একান্ত আন্তরিকতায় আল্লাহ্র দরবারে ফিরে আসা হয়—তাহলে সেই অনুশোচনার ভাষাই হলো: “আস্তাগফিরুল্লাহ” (أستغفر الله)।
‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ — অর্থ ও তাৎপর্য
“আস্তাগফিরুল্লাহ” একটি আরবী বাক্য। এর আভিধানিক অর্থ: “আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই”। এই বাক্যটি এমনই একটি দোআ, যা মানুষ কেবল ঠোঁটে নয়, বরং হৃদয়ের গভীর বেদনা, লজ্জা ও অনুতাপের সাথে উচ্চারণ করে। এটি হচ্ছে এক অনন্য আত্মশুদ্ধির মাধ্যম—যা একজন মানুষকে আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও ক্ষমার দিকে নিয়ে যায়।
পবিত্র কুরআনে ‘ইসতিগফার’-এর গুরুত্ব
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বারবার কুরআনে তাঁর বান্দাদের ইসতিগফার করতে বলেছেন:
“তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁর দিকে ফিরে এসো। তিনি তোমাদের নির্ধারিত সময় পর্যন্ত উত্তম জীবিকা দেবেন...”
(সূরা হুদ, ১১:৩)
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবনেও ছিল ইসতিগফারের অনুপম দৃষ্টান্ত
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন নিষ্পাপ। তবুও তিনি দিনে প্রায় ৭০ থেকে ১০০ বার ইসতিগফার করতেন। হাদীসে এসেছে:
“আমি প্রতিদিন একশতবার আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই এবং তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করি।”
(সহীহ মুসলিম)
এটি আমাদের জন্য এক মহা শিক্ষা—নিজেকে পবিত্র ও আল্লাহর প্রিয় বানাতে ইসতিগফারকে জীবনের প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত করা উচিত।
আজকের সমাজে ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ কেন জরুরি?
বর্তমান সময়ে আমরা প্রায়শই এমন বহু ঘটনা দেখি বা শুনি, যা মানবতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং নৈতিকতার চরম অবক্ষয় ঘটায়। অন্যায়, জুলুম, অশ্লীলতা, নির্যাতন, অন্যের অধিকার হরণ—এসব যখন সামনে আসে, তখন একজন ঈমানদার মুমিন স্বভাবতই বলেন, “আস্তাগফিরুল্লাহ”।
এটি যেন শুধু প্রতিক্রিয়ার শব্দ নয়, বরং আমাদের সমাজে সঠিক ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থানের এক মৌন প্রতিবাদও বটে।
আত্মশুদ্ধির পথে প্রথম পদক্ষেপ
“আস্তাগফিরুল্লাহ” বলার মাধ্যমে একজন মানুষ নিজের ভুল বুঝতে পারে, নফসকে সংযত করতে শিখে এবং ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক হয়। এটি একাধারে পাপমোচনের আবেদন ও আল্লাহ্র রহমত লাভের হাতছানি।
"আস্তাগফিরুল্লাহ" কেবল একটি বাক্য নয় — এটি এক অনুপ্রেরণা, এক আত্মসমালোচনার ডাক, এক আত্মার আহ্বান আল্লাহ্র দিকে ফিরে যাওয়ার। হোক তা একটি ব্যক্তিগত পাপ, সমাজের অবক্ষয়, কিংবা কোনো ভয়াবহ অন্যায় — এই বাক্যটি হৃদয় দিয়ে বললে, তা আমাদের আত্মা, সমাজ ও ভবিষ্যতকে আলোকিত করতে পারে।
আসুন, প্রতিদিনের জীবনে ইসতিগফারকে অভ্যাসে পরিণত করি।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন। আমীন।
প্রকাশক ও সম্পাদক
© কপিরাইট সমাচার বিশ্ব ২০২৫ | আমাদের ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।