বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন বড় শহরে সম্ভাব্য রাজনৈতিক বিক্ষোভ ও গণজমায়েতকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের নাগরিকদের জন্য বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে। ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানায়, রাজনৈতিক কর্মসূচি বা বিক্ষোভের কারণে চলাফেরায় ঝুঁকি বাড়তে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের জারি করা বার্তায় বলা হয়:
“ঢাকা ও অন্যান্য শহরে রাজনৈতিক জমায়েত এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি চলমান রয়েছে কিংবা হঠাৎ করেই শুরু হতে পারে। এগুলো প্রথমে শান্তিপূর্ণ হলেও, যে কোনো সময় সহিংস রূপ নিতে পারে। আমরা আমাদের নাগরিকদের ভিড় এড়িয়ে চলার, বড় জমায়েতের আশপাশে না যাওয়ার এবং স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার প্রতি নজর রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।”
এছাড়া, দূতাবাস তাদের নাগরিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধি করার পরামর্শ দিয়েছে, যেমন:
প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়া পরিচিত পরিবহন ব্যবহার করা মোবাইল ফোন সচল ও চার্জে রাখা
জরুরি নম্বর সংরক্ষণ করে রাখা দূতাবাসের সঙ্গে সংযোগ বজায় রাখা
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই সময়টিতে বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও অবস্থান ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে রাজনৈতিক আবেগ তুঙ্গে রয়েছে।
অন্যদিকে, সরকারদলীয় নেতারা এসব কর্মসূচিকে “উস্কানিমূলক” দাবি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে। ফলে রাজপথে পাল্টাপাল্টি অবস্থান বা সংঘর্ষের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও কয়েকটি ইউরোপীয় দূতাবাস তাদের নাগরিকদের সতর্ক থাকার কথা বলেছে। গত এক বছর ধরে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ বাড়ছে। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন ও সরকারের কড়া অবস্থান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, রাজধানীতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব সদস্য। সিসিটিভি ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সহিংসতা মোকাবেলায় প্রয়োজন হলে বিশেষ বাহিনীও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এ ধরনের সতর্কতা সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেও উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী এবং শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা করছেন যে রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হতে পারে এবং সহিংসতা দেখা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতা কেবল নিরাপত্তার দিক থেকে নয়, বরং চলমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগের প্রতিফলনও বটে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মসূচি ও বিক্ষোভ নতুন কিছু নয়, তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সতর্কতা ইঙ্গিত দেয় যে পরিস্থিতির গুরুত্ব বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ মানুষ—সব পক্ষেরই দায়িত্ব রয়েছে যেন দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত না হয়।
প্রকাশক ও সম্পাদক
© কপিরাইট সমাচার বিশ্ব ২০২৫ | আমাদের ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।