০৩:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সীমান্তে পুশব্যাকের বিরুদ্ধে মামলা, খোদ আসামি এখন বাংলাদেশে

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে আসামের মরিগাঁও জেলার এক শিক্ষকসহ ১৪ জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশব্যাক করার ঘটনা। এ বিষয়ে বুধবার গুয়াহাটি হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি করেছেন খাইরুল ইসলামের আইনজীবী হাফিজ রশিদ চৌধুরী, যিনি এই ঘটনার নৈতিক ও সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

ভুক্তভোগী খাইরুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত ২৩ মে তাকে বাড়ি থেকে ধরে এনে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয় এবং ২৭ মে ভোররাতে চোখ বেঁধে সীমান্তে এনে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। বিবিসি নিশ্চিত করেছেন যে খাইরুল ইসলাম বাংলাদেশ সীমান্তের অভ্যন্তরে অবস্থান করছিলেন।

ভিডিও সাক্ষাৎকারে মি. ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি একজন স্কুলশিক্ষক এবং বর্তমানে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে তার নাগরিকত্বের মামলা চলমান রয়েছে। “যার মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন, তাকে কি এভাবে আরেক দেশে ঠেলে দেওয়া যায়?”—প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী চৌধুরী।

বিএসএফ তাদের বিবৃতিতে পুশব্যাকের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছে, “বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিহত করা হয়েছে।” তবে ঘটনাস্থল ও সময়ের বিবরণ থেকে স্পষ্ট, ওই বিবৃতিই আসলে পুশব্যাক ঘটনার আংশিক স্বীকৃতি।

এদিকে, সীমান্তে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়। বিজিবি ভুক্তভোগীদের ফিরিয়ে দিতে চাইলে বিএসএফ তাদের গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে তারা কিছু সময় ‘জিরো লাইনে’ অবস্থান করেন।

এ ঘটনার পাশাপাশি আসামের বিভিন্ন জেলায় চলমান ‘বিদেশি সনাক্তকরণ’ অভিযানে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন সিটিজেন্স ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস (সিজেপি) জানিয়েছে, গত শনিবার থেকে শতাধিক মুসলিমকে আটক করা হয়েছে। অধিকাংশই দরিদ্র, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীভুক্ত এবং অনেকের কেস আদালতে বিচারাধীন।

সিজেপির আসাম ইনচার্জ পারিজাত নন্দ ঘোষ বলেন, “জানানো হচ্ছে না কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, আইনজীবী বা আত্মীয়দের কারও সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।” তিনি অভিযোগ করেন, ডিটেনশন ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মানছে না, এমনকি তাদের মেমোরেন্ডাম গ্রহণও করেনি।

হাফিজ রশিদ চৌধুরী বলেন, “যাদের আটক করা হয়েছে, অধিকাংশই মুসলমান। বিদেশি ট্রাইব্যুনালগুলো পক্ষপাতদুষ্টভাবে কাজ করছে। যাদের নাগরিকত্ব নিয়ে মামলা চলছে, তাদেরও ডিটেনশনে পাঠানো হচ্ছে।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যে শিক্ষক সুপ্রিম কোর্টে নিজের নাগরিকত্বের লড়াই করছেন, তার ভিডিও যখন বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে আসে, সেটা কি ভারতের পক্ষে লজ্জার নয়?”

তিনি বলেন, “এটি শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, বরং ভারতের সংবিধান ও আইনেরও চরম অবমাননা।”

 

ট্যাগ

সীমান্তে পুশব্যাকের বিরুদ্ধে মামলা, খোদ আসামি এখন বাংলাদেশে

প্রকাশিত হয়েছে: ১১:১৫:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে আসামের মরিগাঁও জেলার এক শিক্ষকসহ ১৪ জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশব্যাক করার ঘটনা। এ বিষয়ে বুধবার গুয়াহাটি হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি করেছেন খাইরুল ইসলামের আইনজীবী হাফিজ রশিদ চৌধুরী, যিনি এই ঘটনার নৈতিক ও সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

ভুক্তভোগী খাইরুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত ২৩ মে তাকে বাড়ি থেকে ধরে এনে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয় এবং ২৭ মে ভোররাতে চোখ বেঁধে সীমান্তে এনে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। বিবিসি নিশ্চিত করেছেন যে খাইরুল ইসলাম বাংলাদেশ সীমান্তের অভ্যন্তরে অবস্থান করছিলেন।

ভিডিও সাক্ষাৎকারে মি. ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি একজন স্কুলশিক্ষক এবং বর্তমানে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে তার নাগরিকত্বের মামলা চলমান রয়েছে। “যার মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন, তাকে কি এভাবে আরেক দেশে ঠেলে দেওয়া যায়?”—প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী চৌধুরী।

বিএসএফ তাদের বিবৃতিতে পুশব্যাকের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছে, “বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিহত করা হয়েছে।” তবে ঘটনাস্থল ও সময়ের বিবরণ থেকে স্পষ্ট, ওই বিবৃতিই আসলে পুশব্যাক ঘটনার আংশিক স্বীকৃতি।

এদিকে, সীমান্তে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়। বিজিবি ভুক্তভোগীদের ফিরিয়ে দিতে চাইলে বিএসএফ তাদের গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে তারা কিছু সময় ‘জিরো লাইনে’ অবস্থান করেন।

এ ঘটনার পাশাপাশি আসামের বিভিন্ন জেলায় চলমান ‘বিদেশি সনাক্তকরণ’ অভিযানে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন সিটিজেন্স ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস (সিজেপি) জানিয়েছে, গত শনিবার থেকে শতাধিক মুসলিমকে আটক করা হয়েছে। অধিকাংশই দরিদ্র, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীভুক্ত এবং অনেকের কেস আদালতে বিচারাধীন।

সিজেপির আসাম ইনচার্জ পারিজাত নন্দ ঘোষ বলেন, “জানানো হচ্ছে না কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, আইনজীবী বা আত্মীয়দের কারও সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।” তিনি অভিযোগ করেন, ডিটেনশন ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মানছে না, এমনকি তাদের মেমোরেন্ডাম গ্রহণও করেনি।

হাফিজ রশিদ চৌধুরী বলেন, “যাদের আটক করা হয়েছে, অধিকাংশই মুসলমান। বিদেশি ট্রাইব্যুনালগুলো পক্ষপাতদুষ্টভাবে কাজ করছে। যাদের নাগরিকত্ব নিয়ে মামলা চলছে, তাদেরও ডিটেনশনে পাঠানো হচ্ছে।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যে শিক্ষক সুপ্রিম কোর্টে নিজের নাগরিকত্বের লড়াই করছেন, তার ভিডিও যখন বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে আসে, সেটা কি ভারতের পক্ষে লজ্জার নয়?”

তিনি বলেন, “এটি শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, বরং ভারতের সংবিধান ও আইনেরও চরম অবমাননা।”