মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং হৃদয়বিদারক ঘটনা হলো তাঁর বিদায় হজ। এটি ছিল একমাত্র হজ যা তিনি স্বয়ং সম্পন্ন করেছিলেন এবং এ হজে তাঁর ভাষণের মধ্য দিয়ে ইসলামি জীবনব্যবস্থার পূর্ণতা ঘোষণা করা হয়।
বিদায় হজ পালিত হয় ১০ হিজরি সনের জিলহজ মাসে। রাসূল (সা.) মদিনা থেকে হজের উদ্দেশ্যে রওনা হন ২৫শে জিলকদ তারিখে, প্রায় ৯০ হাজার থেকে ১ লক্ষের মতো সাহাবী তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
তিনি মক্কায় পৌঁছে ৮ই জিলহজ কাবা শরিফে গমন করেন এবং যথারীতি হজের সব নিয়ম-নীতি আদায় করেন।
🕋 হজের গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি
আরাফাতের ময়দানে প্রদত্ত খুতবায়, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
❝হে মানবজাতি! তোমরা সবাই আদম (আ.)-এর সন্তান, আর আদম মাটি থেকে সৃষ্টি হয়েছেন। কোন আরবের উপর অনারবের, অনারবের উপর আরবের, কালোর উপর সাদার, বা সাদার উপর কালোর কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই — শুধুই তাকওয়ার ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারিত।❞
(মুসলিম, হাদীস ১২১৮; ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩০৫৫)
তিনি আরও বলেন:
❝আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা তা আঁকড়ে ধরো তবে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না — তা হলো আল্লাহর কিতাব (কুরআন) এবং আমার সুন্নাহ।❞
(মুয়াত্তা মালিক, হাদীস ১৬১৩)
আরাফার মাঠে থাকাকালীন নাজিল হয় ঐতিহাসিক আয়াত:
"আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণতা দান করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।"
— সূরা আল-মায়িদাহ: ৩
এই আয়াতের মাধ্যমে ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে পরিপূর্ণতা লাভ করে।
রাসূল (সা.) তাঁর খুতবায় বলেন:
❝হয়ত এই হজের পর আমি তোমাদের সাথে আর কখনো এখানে মিলিত হতে পারব না।❞
এ কথায় উপস্থিত সাহাবীরা অশ্রুসজল হয়ে পড়েন। এই হজের পর রাসূল (সা.) মাত্র তিন মাস বেঁচে ছিলেন।
বিদায় হজ ছিল মানবতা, সাম্য, ন্যায়বিচার, নারী-পুরুষের অধিকার এবং ইসলামি জীবনব্যবস্থার সারাংশ উপস্থাপনের চূড়ান্ত মঞ্চ। এর খুতবায় তুলে ধরা হয়েছে এমন এক আদর্শ সমাজব্যবস্থার রূপরেখা, যা আজও মানব জাতির জন্য পথপ্রদর্শক।
প্রকাশক ও সম্পাদক
© কপিরাইট সমাচার বিশ্ব ২০২৫ | আমাদের ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।