০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাতীয় ঐকমত্য গঠনে দ্বিতীয় দফার আলোচনা শুরু

রাষ্ট্রীয় সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শুরু করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আজ সোমবার (২ জুন) বিকেল পাঁচটায় বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে এই আলোচনা শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ ও আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস; জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ; গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি; জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারসহ বিভিন্ন দলের নেতারা অংশ নিয়েছেন।

কমিশন সূত্র জানায়, এই ধাপে ঈদুল আজহার আগে ও পরে ধারাবাহিকভাবে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা হবে। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে যেগুলোতে এখনো ঐকমত্য হয়নি। আগামী জুলাই মাসে একটি সর্বসম্মত দলিল ‘জুলাই সনদ’ প্রকাশের লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবরে অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে—সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, বিচারবিভাগ, দুর্নীতি দমন ও পুলিশ সংস্কার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কমিশনগুলো পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কমিশনের উদ্যোগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়।

প্রথম পর্বে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩৩টি দলের সঙ্গে আলোচনা হয়। পরে ২৬ মে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রথম পর্যায়ের অগ্রগতি তুলে ধরেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি জানান, কিছু মৌলিক বিষয়ে এখনো ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি—যেমন, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়োগ ও মেয়াদ, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একই ব্যক্তির নির্বাচনের সংখ্যা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া এবং সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতি।

তবে কমিশনের দাবি, অনেক দল এসব বিষয়ে আলোচনায় নমনীয়তা দেখিয়েছে এবং সমাধানের পথ খোলা রেখেছে।

থম পর্বে কিছু মৌলিক কাঠামোগত বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি। এর মধ্যে রয়েছে:

  • বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ কাঠামো

  • তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ ও মেয়াদ নির্ধারণ

  • প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা

  • একই ব্যক্তি কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন

  • রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি

  • সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়া

  • জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন

তবে কমিশনের দাবি, এসব বিষয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইতিবাচক ও নমনীয় মনোভাব দেখিয়েছে এবং প্রয়োজনীয় আলোচনায় অংশ নিতে আগ্রহী।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিভক্তি ও পারস্পরিক অবিশ্বাসের প্রেক্ষাপটে এই ধরণের আন্তঃদলীয় আলোচনা একটি সাহসী পদক্ষেপ। তবে মৌলিক সাংবিধানিক কাঠামোতে সংস্কার আনার জন্য বাস্তবসম্মত এবং দীর্ঘমেয়াদি সমঝোতা প্রয়োজন।

‘জুলাই সনদ’ যদি একটি শক্তিশালী এবং গ্রহণযোগ্য প্রস্তাবনাপত্র হিসেবে উঠে আসে, তবে সেটি বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংকট নিরসনে একটি মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে।

ট্যাগ

জাতীয় ঐকমত্য গঠনে দ্বিতীয় দফার আলোচনা শুরু

প্রকাশিত হয়েছে: ০৭:০১:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫

রাষ্ট্রীয় সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শুরু করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আজ সোমবার (২ জুন) বিকেল পাঁচটায় বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে এই আলোচনা শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ ও আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস; জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ; গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি; জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারসহ বিভিন্ন দলের নেতারা অংশ নিয়েছেন।

কমিশন সূত্র জানায়, এই ধাপে ঈদুল আজহার আগে ও পরে ধারাবাহিকভাবে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা হবে। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে যেগুলোতে এখনো ঐকমত্য হয়নি। আগামী জুলাই মাসে একটি সর্বসম্মত দলিল ‘জুলাই সনদ’ প্রকাশের লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবরে অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে—সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, বিচারবিভাগ, দুর্নীতি দমন ও পুলিশ সংস্কার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কমিশনগুলো পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কমিশনের উদ্যোগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়।

প্রথম পর্বে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩৩টি দলের সঙ্গে আলোচনা হয়। পরে ২৬ মে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রথম পর্যায়ের অগ্রগতি তুলে ধরেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি জানান, কিছু মৌলিক বিষয়ে এখনো ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি—যেমন, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়োগ ও মেয়াদ, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একই ব্যক্তির নির্বাচনের সংখ্যা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া এবং সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতি।

তবে কমিশনের দাবি, অনেক দল এসব বিষয়ে আলোচনায় নমনীয়তা দেখিয়েছে এবং সমাধানের পথ খোলা রেখেছে।

থম পর্বে কিছু মৌলিক কাঠামোগত বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি। এর মধ্যে রয়েছে:

  • বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ কাঠামো

  • তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ ও মেয়াদ নির্ধারণ

  • প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা

  • একই ব্যক্তি কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন

  • রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি

  • সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়া

  • জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন

তবে কমিশনের দাবি, এসব বিষয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইতিবাচক ও নমনীয় মনোভাব দেখিয়েছে এবং প্রয়োজনীয় আলোচনায় অংশ নিতে আগ্রহী।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিভক্তি ও পারস্পরিক অবিশ্বাসের প্রেক্ষাপটে এই ধরণের আন্তঃদলীয় আলোচনা একটি সাহসী পদক্ষেপ। তবে মৌলিক সাংবিধানিক কাঠামোতে সংস্কার আনার জন্য বাস্তবসম্মত এবং দীর্ঘমেয়াদি সমঝোতা প্রয়োজন।

‘জুলাই সনদ’ যদি একটি শক্তিশালী এবং গ্রহণযোগ্য প্রস্তাবনাপত্র হিসেবে উঠে আসে, তবে সেটি বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংকট নিরসনে একটি মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে।