২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষিত হয়েছে সংসদবিহীন এক ব্যতিক্রমধর্মী প্রেক্ষাপটে। সংসদ না থাকায় বাজেট পেশ করা হয়েছে জাতীয় বেতার ও টেলিভিশনের মাধ্যমে—যা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল এক নজির।
এই বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫.৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সাময়িক হিসেবে এই হার ছিল মাত্র ৩.৯৭ শতাংশ—যা গত এক দশকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তৃতায় বলেন:
“মূল্যস্ফীতির সাথে লড়াইয়ের কারণে প্রবৃদ্ধি সাময়িকভাবে কমলেও আগামী অর্থবছর থেকে তা বাড়বে এবং মধ্যমেয়াদে ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আমরা আশাবাদী।”
সরকার চলতি অর্থবছরের লাগামহীন মূল্যস্ফীতি আগামী বছর ৬.৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। তবে এই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য পূরণ করতে প্রয়োজন বাজারে পণ্য সরবরাহে স্থিতিশীলতা, আমদানি নির্ভরতা হ্রাস এবং উৎপাদন খাতে কার্যকর নীতিগত হস্তক্ষেপ—যা বাজেটে স্পষ্টভাবে উঠে আসেনি।
অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হানের মতে:
“এই মুহূর্তে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগের সবচেয়ে স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে। নতুন বিনিয়োগে বড় ধরনের উদ্যোগ না নিয়ে সরকার যে প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তা বাস্তবতা বিবর্জিত ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী বলেই মনে হচ্ছে।”
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা পরিচালনার জটিলতা, নীতিনির্ধারণে অস্থিরতা, এবং নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করছে। বাজেটে এসব চ্যালেঞ্জ দূরীকরণে কার্যকর রূপরেখার অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
যদিও অন্তর্বর্তী সরকার একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রেক্ষাপটে বাজেট পেশ করেছে, কিন্তু তার লক্ষ্য ও বাস্তবতার ব্যবধান নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে জোরালো প্রশ্ন রয়েছে। উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, এবং বিনিয়োগে গতিশীলতা—এই তিনটি খাতে বাজেট কতটা ফলপ্রসূ হয়, তা নির্ভর করবে তার বাস্তবায়নযোগ্যতা ও প্রশাসনিক সক্ষমতার ওপর।
এই প্রেক্ষাপটে, বাজেট বাস্তবায়ন এখন কেবল অর্থ উপদেষ্টার পরিকল্পনার বিষয় নয়—বরং এটি দেশের সামষ্টিক আর্থ-রাজনৈতিক পরিবেশের এক বড় পরীক্ষা।
প্রকাশক ও সম্পাদক
© কপিরাইট সমাচার বিশ্ব ২০২৫ | আমাদের ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।