০১:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেটের যত চ্যালেঞ্জ

অর্থনৈতিক চাপ, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং জনআস্থা পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণা করেছে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। ক্ষমতা গ্রহণের দশ মাসের মাথায় এই প্রথম বাজেট ঘোষণা করা হলো।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন, যা গত বছরের তুলনায় সাত হাজার কোটি টাকা কম। সরকারের ভাষায় এটিই দেশের ইতিহাসে প্রথম ছোট আকারের বাজেট, যেখানে প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে সামগ্রিক উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজেটের আকার কমালেও কাঠামোগত দিক থেকে এটি তেমন ভিন্ন কিছু নয়।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বিবিসি বাংলাকে বলেন,

“বাজেটে কিছু ইতিবাচক লক্ষ্য থাকলেও কাঠামোটি পুরনো। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ভিন্নধর্মী ও সংস্কারমূলক বাজেটের প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু তারা সেটি পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন।”

মূল চ্যালেঞ্জসমূহ:

  • মূল্যস্ফীতি: টানা কয়েক মাস ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে।
  • রাজস্ব ঘাটতি: রাজস্ব আয় আশানুরূপ না হওয়ায় বাজেট বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে।
  • বিদেশি ঋণের শর্ত: বৈদেশিক ঋণ গ্রহণে কঠোর শর্ত পালনের বাধ্যবাধকতা বাজেট ব্যবস্থাপনাকে জটিল করে তুলবে।
  • বিনিয়োগ স্থবিরতা: রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বেসরকারি বিনিয়োগে গতি আসছে না।

নতুন করদাতা সংগ্রহের পরিবর্তে বিদ্যমান করদাতাদের ওপর আরও চাপ বাড়ানোর প্রস্তাব অর্থনীতিবিদদের দৃষ্টিতে বৈষম্যমূলক। একইসঙ্গে, আবারও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখায় সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হতে পারে।

অর্থ উপদেষ্টার মতে,

“আমরা চেয়েছি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় সরাসরি প্রভাব ফেলে—এমন কিছু খাতে ব্যয় বাড়াতে। এই বাজেট শুধু সংখ্যা নয়, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের প্রতিফলন।”

তবে বাস্তবতা হলো, জনগণের জীবনযাত্রা, কর্মসংস্থান, কৃষি ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অর্থ বরাদ্দ কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হয়, সেটিই হবে এই বাজেটের সফলতা নির্ধারণে মূল বিষয়।
অন্তর্বর্তী সরকার একটি উত্তরণপর্বে থাকা রাষ্ট্রকে সামলাতে গিয়ে একদিকে স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতার চ্যালেঞ্জে আছে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার পরীক্ষায়। তাই বাজেটটিকে শুধু অর্থনৈতিক দলিল নয়, রাজনৈতিক বার্তা হিসেবেও দেখা হচ্ছে। তবে কাঠামোগত সংস্কার বা বাস্তবায়নযোগ্য রূপান্তর ছাড়া কেবল বক্তৃতায় “ব্যতিক্রমধর্মী” বললে জনগণ সন্তুষ্ট হবে না—এমন মত বিশ্লেষকদের।

 

ট্যাগ

অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেটের যত চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত হয়েছে: ০৭:০০:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫

অর্থনৈতিক চাপ, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং জনআস্থা পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণা করেছে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। ক্ষমতা গ্রহণের দশ মাসের মাথায় এই প্রথম বাজেট ঘোষণা করা হলো।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন, যা গত বছরের তুলনায় সাত হাজার কোটি টাকা কম। সরকারের ভাষায় এটিই দেশের ইতিহাসে প্রথম ছোট আকারের বাজেট, যেখানে প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে সামগ্রিক উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজেটের আকার কমালেও কাঠামোগত দিক থেকে এটি তেমন ভিন্ন কিছু নয়।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বিবিসি বাংলাকে বলেন,

“বাজেটে কিছু ইতিবাচক লক্ষ্য থাকলেও কাঠামোটি পুরনো। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ভিন্নধর্মী ও সংস্কারমূলক বাজেটের প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু তারা সেটি পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন।”

মূল চ্যালেঞ্জসমূহ:

  • মূল্যস্ফীতি: টানা কয়েক মাস ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে।
  • রাজস্ব ঘাটতি: রাজস্ব আয় আশানুরূপ না হওয়ায় বাজেট বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে।
  • বিদেশি ঋণের শর্ত: বৈদেশিক ঋণ গ্রহণে কঠোর শর্ত পালনের বাধ্যবাধকতা বাজেট ব্যবস্থাপনাকে জটিল করে তুলবে।
  • বিনিয়োগ স্থবিরতা: রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বেসরকারি বিনিয়োগে গতি আসছে না।

নতুন করদাতা সংগ্রহের পরিবর্তে বিদ্যমান করদাতাদের ওপর আরও চাপ বাড়ানোর প্রস্তাব অর্থনীতিবিদদের দৃষ্টিতে বৈষম্যমূলক। একইসঙ্গে, আবারও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখায় সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হতে পারে।

অর্থ উপদেষ্টার মতে,

“আমরা চেয়েছি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় সরাসরি প্রভাব ফেলে—এমন কিছু খাতে ব্যয় বাড়াতে। এই বাজেট শুধু সংখ্যা নয়, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের প্রতিফলন।”

তবে বাস্তবতা হলো, জনগণের জীবনযাত্রা, কর্মসংস্থান, কৃষি ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অর্থ বরাদ্দ কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হয়, সেটিই হবে এই বাজেটের সফলতা নির্ধারণে মূল বিষয়।
অন্তর্বর্তী সরকার একটি উত্তরণপর্বে থাকা রাষ্ট্রকে সামলাতে গিয়ে একদিকে স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতার চ্যালেঞ্জে আছে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার পরীক্ষায়। তাই বাজেটটিকে শুধু অর্থনৈতিক দলিল নয়, রাজনৈতিক বার্তা হিসেবেও দেখা হচ্ছে। তবে কাঠামোগত সংস্কার বা বাস্তবায়নযোগ্য রূপান্তর ছাড়া কেবল বক্তৃতায় “ব্যতিক্রমধর্মী” বললে জনগণ সন্তুষ্ট হবে না—এমন মত বিশ্লেষকদের।