
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ঘিরে অর্থনীতিবিদরা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের দিক তুলে ধরেছেন। তাঁদের মতে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি এবং সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ—এই কয়েকটি ক্ষেত্রে বাজেটকে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে।
অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হান বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা ছিল—বৈষম্যবিরোধী চেতনা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি। কিন্তু বিনিয়োগ উৎসাহিত না হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব নয়।”
তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে দেশে নতুন বিনিয়োগের গতি কার্যত থেমে গেছে বলে মনে করেন তিনি।
অপরদিকে, বাজেটে করের হার বাড়ানো হলেও করের আওতা বাড়ানোর উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। ফলে বিদ্যমান করদাতাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ড. রায়হান বলেন, “এই করহারের বিপরীতে এমন কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই যা করদাতাদের উৎসাহিত করবে। ফলে রাজস্ব আহরণেও সমস্যা তৈরি হতে পারে।”
এ ছাড়া রাজস্ব প্রশাসনের ভেতরে কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ এবং কাঠামোগত দুর্বলতা দ্রুত সমাধান না হলে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে সতর্ক করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস এবং ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড় ধরনের এই ঘাটতি মেটাতে দেশি ও বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভর করতে হবে। কিন্তু এসব ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা, যা পুরো বাজেটের প্রায় ১৫.৫ শতাংশ। এটি বাজেট বাস্তবায়নের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন ড. রায়হান।
অর্থনীতিবিদদের মতে, প্রস্তাবিত বাজেটের সফল বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা, করব্যবস্থার সংস্কার সাধন, রাজস্ব প্রশাসনের দক্ষতা বাড়ানো এবং সামাজিক বৈষম্য হ্রাসে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে বাজেট শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।