১০:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লন্ডনে ইউনূস-তারেক সম্ভাব্য বৈঠক: রাজনৈতিক সমঝোতার ইঙ্গিত?

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার রাতে একটি সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন। সফর উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘সরকারি’ তকমা থাকলেও, ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছ থেকে ‘কিংস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণকেই কেন্দ্রবিন্দু মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।

তবে এ সফর নিয়ে সবচেয়ে বেশি গুঞ্জন তৈরি হয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সম্ভাব্য এক বৈঠক ঘিরে। ঢাকায় বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র দাবি করছে, অধ্যাপক ইউনূসের পক্ষ থেকেই এই বৈঠকের বিষয়ে আগ্রহ জানানো হয়েছে। যদিও সরকারিভাবে এমন কোনও তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সফরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে, তবে সেটির সময়সূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। পাশাপাশি বাসস জানায়, এই সফরের অন্যতম লক্ষ্য যুক্তরাজ্যের সমর্থনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়টি তুলে ধরা।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ইউনূস যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ, কমনওয়েলথ মহাসচিব ও কয়েকজন শীর্ষ ব্রিটিশ কর্মকর্তা ও কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়া তিনি কিংস ফাউন্ডেশনের নৈশভোজ ও চ্যাথাম হাউসে সংলাপে অংশ নেবেন।

৪ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী বলেন, “সফরসূচিতে তারেক রহমানের সঙ্গে কোনও বৈঠকের তথ্য নেই।” কিন্তু বিএনপির একাধিক সূত্র দাবি করছে, উভয় পক্ষের মধ্যে বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। এমনকি ইউনূস-তারেক বৈঠক হতে পারে এমন সম্ভাবনার কথা সামাজিক মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে।

এখানে একটি বড় প্রশ্ন হচ্ছে—একজন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, যিনি একটি ‘সরকারি সফর’-এ রয়েছেন, তিনি কীভাবে একজন স্বেচ্ছা নির্বাসিত রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন? কূটনৈতিক রীতিনীতির দিক থেকেও এটি ব্যতিক্রম এবং বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।

প্রসঙ্গত, ইউনূস সম্প্রতি জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে আগামী এপ্রিলের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা জানিয়েছেন, যা বিএনপি নেতাদের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে। অন্যদিকে, তারেক রহমান কয়েক দিন আগেই দাবি করেছিলেন, “নির্বাচন হতে হবে ডিসেম্বরেই।”

এই ভিন্ন অবস্থান থেকেই ধারণা করা হচ্ছে, দুই পক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য ও দূরত্ব তৈরি হয়েছে—এবং এমন পটভূমিতে একটি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনাকে কেউ কেউ দেখছেন একটি সম্ভাব্য সমঝোতার উদ্যোগ হিসেবে।

সংক্ষিপ্তভাবে মূল বিষয়গুলো:

  • প্রধান উপদেষ্টার সফর: সরকারি তকমা থাকলেও মূল গুরুত্ব ‘হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণে।
  • তারেক রহমান বৈঠক: সরকারি নিশ্চয়তা নেই, কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে সম্ভাবনার ইঙ্গিত।
  • নির্বাচনী সময়: এপ্রিল বনাম ডিসেম্বর—এ নিয়ে উভয় পক্ষের অবস্থানে ব্যবধান।
  • অন্য কর্মসূচি: চ্যাথাম হাউস সংলাপ, রাজা চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ, কিয়ের স্টারমারের সঙ্গে সম্ভাব্য বৈঠক।

এই সফর কেবলমাত্র একটি পুরস্কার গ্রহণ কিংবা কূটনৈতিক বৈঠকের সুযোগ নয়—বরং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন অঙ্ক কষার একটি সম্ভাব্য ক্ষেত্রও হতে পারে।

 

ট্যাগ

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

লন্ডনে ইউনূস-তারেক সম্ভাব্য বৈঠক: রাজনৈতিক সমঝোতার ইঙ্গিত?

প্রকাশিত হয়েছে: ০৬:৩৯:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ জুন ২০২৫

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার রাতে একটি সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন। সফর উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘সরকারি’ তকমা থাকলেও, ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছ থেকে ‘কিংস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণকেই কেন্দ্রবিন্দু মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।

তবে এ সফর নিয়ে সবচেয়ে বেশি গুঞ্জন তৈরি হয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সম্ভাব্য এক বৈঠক ঘিরে। ঢাকায় বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র দাবি করছে, অধ্যাপক ইউনূসের পক্ষ থেকেই এই বৈঠকের বিষয়ে আগ্রহ জানানো হয়েছে। যদিও সরকারিভাবে এমন কোনও তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সফরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে, তবে সেটির সময়সূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। পাশাপাশি বাসস জানায়, এই সফরের অন্যতম লক্ষ্য যুক্তরাজ্যের সমর্থনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়টি তুলে ধরা।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ইউনূস যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ, কমনওয়েলথ মহাসচিব ও কয়েকজন শীর্ষ ব্রিটিশ কর্মকর্তা ও কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়া তিনি কিংস ফাউন্ডেশনের নৈশভোজ ও চ্যাথাম হাউসে সংলাপে অংশ নেবেন।

৪ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী বলেন, “সফরসূচিতে তারেক রহমানের সঙ্গে কোনও বৈঠকের তথ্য নেই।” কিন্তু বিএনপির একাধিক সূত্র দাবি করছে, উভয় পক্ষের মধ্যে বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। এমনকি ইউনূস-তারেক বৈঠক হতে পারে এমন সম্ভাবনার কথা সামাজিক মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে।

এখানে একটি বড় প্রশ্ন হচ্ছে—একজন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, যিনি একটি ‘সরকারি সফর’-এ রয়েছেন, তিনি কীভাবে একজন স্বেচ্ছা নির্বাসিত রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন? কূটনৈতিক রীতিনীতির দিক থেকেও এটি ব্যতিক্রম এবং বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।

প্রসঙ্গত, ইউনূস সম্প্রতি জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে আগামী এপ্রিলের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা জানিয়েছেন, যা বিএনপি নেতাদের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে। অন্যদিকে, তারেক রহমান কয়েক দিন আগেই দাবি করেছিলেন, “নির্বাচন হতে হবে ডিসেম্বরেই।”

এই ভিন্ন অবস্থান থেকেই ধারণা করা হচ্ছে, দুই পক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য ও দূরত্ব তৈরি হয়েছে—এবং এমন পটভূমিতে একটি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনাকে কেউ কেউ দেখছেন একটি সম্ভাব্য সমঝোতার উদ্যোগ হিসেবে।

সংক্ষিপ্তভাবে মূল বিষয়গুলো:

  • প্রধান উপদেষ্টার সফর: সরকারি তকমা থাকলেও মূল গুরুত্ব ‘হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণে।
  • তারেক রহমান বৈঠক: সরকারি নিশ্চয়তা নেই, কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে সম্ভাবনার ইঙ্গিত।
  • নির্বাচনী সময়: এপ্রিল বনাম ডিসেম্বর—এ নিয়ে উভয় পক্ষের অবস্থানে ব্যবধান।
  • অন্য কর্মসূচি: চ্যাথাম হাউস সংলাপ, রাজা চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ, কিয়ের স্টারমারের সঙ্গে সম্ভাব্য বৈঠক।

এই সফর কেবলমাত্র একটি পুরস্কার গ্রহণ কিংবা কূটনৈতিক বৈঠকের সুযোগ নয়—বরং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন অঙ্ক কষার একটি সম্ভাব্য ক্ষেত্রও হতে পারে।