০৭:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গুজরাটে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় ২৪১ জন নিহত, একজন অলৌকিকভাবে বেঁচে ফেরেছেন

ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় ২৪১ জন আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) স্থানীয় সময় দুপুরে আহমেদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করার কিছুক্ষণের মধ্যেই এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট এআই-১৭১ বিধ্বস্ত হয়। বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার মডেলের বিমানটিতে মোট ২৪২ জন আরোহী ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

আহত নিহতের পরিচয়

বিমানটিতে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ এবং ১ জন কানাডিয়ান নাগরিক ছিলেন। ২৪২ আরোহীর মধ্যে ২৩০ জন ছিলেন যাত্রী এবং বাকি ১২ জন ছিলেন বিমানকর্মী। ভারতীয় গণমাধ্যম নিউজ-১৮ এবং ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পরপরই একজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

উড্ডয়নের পরপরই বিপত্তি

বিমানটি দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করে। তবে উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যেই এটি আচমকা নিচে নামতে শুরু করে এবং ৮২৫ ফুট উচ্চতায় পৌঁছানোর পর আবাসিক এলাকার একটি মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে আছড়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আকাশে ঘন কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে। দুর্ঘটনার সময় পাইলট ‘মে ডে’ কল করে এটিসিকে জরুরি সংকেত পাঠান। কিন্তু এর পরপরই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

প্রাথমিক তদন্ত: পাখির ধাক্কা?

বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ ও সাবেক ক্যাপ্টেন সৌরভ ভাটনাগর এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মনে হচ্ছে, উড্ডয়নের সঙ্গে সঙ্গেই বিমানটি একাধিক পাখির সঙ্গে সংঘর্ষে পড়ে। এতে বিমানটির দুটি ইঞ্জিনই বিকল হয়ে পড়ে। ল্যান্ডিং গিয়ারও পুরোপুরি ওপরে ওঠানো সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, “বিমানটি নিয়ন্ত্রিতভাবে নামার চেষ্টা করছিল। কিন্তু ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ায় সেটি সম্ভব হয়নি।”

উদ্ধার তৎপরতা সরকারি প্রতিক্রিয়া

দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে ২০টিরও বেশি অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিস মোতায়েন করা হয়। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকার সড়কগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিকল্প রুট চালু করেছে প্রশাসন।

ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী রাম মোহন নাইডু এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমি ঘটনাটি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করছি। উদ্ধার কার্যক্রম ও চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করতে সব এজেন্সিকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে বলা হয়েছে।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “ফ্লাইট এআই ১৭১ গ্যাটউইকে সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে পৌঁছানোর কথা ছিল। আমরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং পরিস্থিতির সার্বিক খোঁজ নিচ্ছি।”

উল্লেখযোগ্য তথ্য এক নজরে:

  • বিমান: এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার
  • যাত্রা: আহমেদাবাদ → লন্ডন গ্যাটউইক
  • আরোহী সংখ্যা: ২৪২ (যাত্রী ২৩০, ক্রু ১২)
  • নিহত: ২৪১
  • জীবিত: ১ (আহত অবস্থায় হাসপাতালে)
  • সম্ভাব্য কারণ: পাখির সঙ্গে সংঘর্ষে ইঞ্জিন বিকল
  • বিধ্বস্তের স্থান: আবাসিক এলাকার মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাস

শেষ কথা

দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে তদন্ত শুরু করেছে ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (DGCA)। পুরো দেশ এই শোকাবহ ঘটনায় শোকাহত। আন্তর্জাতিক মহলেও গভীর শোক ও সমবেদনার ঢল বইছে।

ট্যাগ
জনপ্রিয় সংবাদ

গুজরাটে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় ২৪১ জন নিহত, একজন অলৌকিকভাবে বেঁচে ফেরেছেন

প্রকাশিত হয়েছে: ০৯:১০:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫

ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় ২৪১ জন আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) স্থানীয় সময় দুপুরে আহমেদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করার কিছুক্ষণের মধ্যেই এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট এআই-১৭১ বিধ্বস্ত হয়। বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার মডেলের বিমানটিতে মোট ২৪২ জন আরোহী ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

আহত নিহতের পরিচয়

বিমানটিতে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ এবং ১ জন কানাডিয়ান নাগরিক ছিলেন। ২৪২ আরোহীর মধ্যে ২৩০ জন ছিলেন যাত্রী এবং বাকি ১২ জন ছিলেন বিমানকর্মী। ভারতীয় গণমাধ্যম নিউজ-১৮ এবং ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পরপরই একজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

উড্ডয়নের পরপরই বিপত্তি

বিমানটি দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করে। তবে উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যেই এটি আচমকা নিচে নামতে শুরু করে এবং ৮২৫ ফুট উচ্চতায় পৌঁছানোর পর আবাসিক এলাকার একটি মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে আছড়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আকাশে ঘন কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে। দুর্ঘটনার সময় পাইলট ‘মে ডে’ কল করে এটিসিকে জরুরি সংকেত পাঠান। কিন্তু এর পরপরই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

প্রাথমিক তদন্ত: পাখির ধাক্কা?

বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ ও সাবেক ক্যাপ্টেন সৌরভ ভাটনাগর এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মনে হচ্ছে, উড্ডয়নের সঙ্গে সঙ্গেই বিমানটি একাধিক পাখির সঙ্গে সংঘর্ষে পড়ে। এতে বিমানটির দুটি ইঞ্জিনই বিকল হয়ে পড়ে। ল্যান্ডিং গিয়ারও পুরোপুরি ওপরে ওঠানো সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, “বিমানটি নিয়ন্ত্রিতভাবে নামার চেষ্টা করছিল। কিন্তু ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ায় সেটি সম্ভব হয়নি।”

উদ্ধার তৎপরতা সরকারি প্রতিক্রিয়া

দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে ২০টিরও বেশি অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিস মোতায়েন করা হয়। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকার সড়কগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিকল্প রুট চালু করেছে প্রশাসন।

ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী রাম মোহন নাইডু এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমি ঘটনাটি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করছি। উদ্ধার কার্যক্রম ও চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করতে সব এজেন্সিকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে বলা হয়েছে।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “ফ্লাইট এআই ১৭১ গ্যাটউইকে সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে পৌঁছানোর কথা ছিল। আমরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং পরিস্থিতির সার্বিক খোঁজ নিচ্ছি।”

উল্লেখযোগ্য তথ্য এক নজরে:

  • বিমান: এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার
  • যাত্রা: আহমেদাবাদ → লন্ডন গ্যাটউইক
  • আরোহী সংখ্যা: ২৪২ (যাত্রী ২৩০, ক্রু ১২)
  • নিহত: ২৪১
  • জীবিত: ১ (আহত অবস্থায় হাসপাতালে)
  • সম্ভাব্য কারণ: পাখির সঙ্গে সংঘর্ষে ইঞ্জিন বিকল
  • বিধ্বস্তের স্থান: আবাসিক এলাকার মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাস

শেষ কথা

দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে তদন্ত শুরু করেছে ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (DGCA)। পুরো দেশ এই শোকাবহ ঘটনায় শোকাহত। আন্তর্জাতিক মহলেও গভীর শোক ও সমবেদনার ঢল বইছে।