০৪:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম’: ফজিলত ও তাৎপর্য

আল্লাহর ৯৯টি গুণবাচক নামের মধ্যে এক বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ নাম হলো ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম, যেটিকে ইসলামি পরিভাষায় ইসমে আজম বা মহান নাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই নামের তাৎপর্য এবং ফজিলত সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা।

‘জালাল’ শব্দের অর্থ হলো মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব এবং ‘ইকরাম’ মানে সম্মানিত। এই নামের মাধ্যমে আল্লাহর সেই মহান সত্তাকে বোঝানো হয় যিনি সমস্ত সৃষ্টি জগতের মালিক, যিনি ভয় ও ভক্তির যোগ্য এবং যাঁর প্রশংসা করা একমাত্র নিরঙ্কুশভাবে বৈধ ও প্রযোজ্য।

পবিত্র কোরআনে ‘ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ নামটি এসেছে সুরা আর-রহমানের ২৭ ও ৭৮ নম্বর আয়াতে। এই নামটি আল্লাহর দয়া, মহত্ত্ব ও ইহসানের গভীর প্রকাশ ঘটায়।

নবীজি মুহাম্মদ (সা.) সাহাবিদের উদ্দেশে বলেছেন, তোমরা সব সময়ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরামপড়াকে অভ্যাসে পরিণত করো (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫২৫)। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, এই নাম পাঠ করা শুধু দোয়া নয়, বরং একটি ধারাবাহিক ইবাদতের অংশ হতে পারে।

একবার এক ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে এই দোয়া করেন—
আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্না লাকাল হামদু, লা ইলাহা ইল্লা আনতা, আল মান্নান, বাদিউস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম, ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুম

এ কথা শুনে রাসুল (সা.) বলেছিলেন, তুমি আল্লাহকে ইসমে আজম দিয়ে ডাকেছো। এই নামে দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন এবং কিছু চাইলে তা প্রদান করেন (তিরমিজি: ৩৫৪৪; আবু দাউদ: ১৪৯৫; নাসাঈ: ১৩০)।

নামাজ শেষে রাসুল (সা.) বলতেন:
আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারাকতা ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম (মুসলিম, হাদিস: ৫৯১-৫৯২)। এই দোয়া আল্লাহর প্রশান্তি ও সম্মানের প্রকাশ বহন করে।

পবিত্র কোরআনে বারবার আল্লাহর গুণবাচক নাম স্মরণ ও জিকির করার নির্দেশনা এসেছে।
আল্লাহ বলেন—
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো এবং সকালসন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করো (সুরা আহজাব, আয়াত: ৪১-৪২)।
আরও বলা হয়েছে, আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ রয়েছে, তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাকো (সুরা আরাফ, আয়াত: ১৮০)।

বিখ্যাত তাফসিরকার ইমাম আবু জাফর তাবারি (র.) বলেন, আল্লাহর প্রত্যেকটি গুণবাচক নামই ইসমে আজমের অন্তর্ভুক্ত। কেউ যদি এই নামগুলো নিয়মিত জিকির করে, তবে আল্লাহ তাঁর দুনিয়া আখেরাতের কাজ সহজ করে দেবেন।

‘ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ শুধু একটি নাম নয়—এটি আল্লাহর এক অতুলনীয়, মর্যাদাময় সত্তার স্মরণ, যার মাধ্যমে বান্দা তাঁর দয়া ও করুণা অর্জন করতে পারে। কোরআন ও হাদিসে যেভাবে এই নামের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে, তাতে প্রতিদিন এই নাম পাঠের অভ্যাস গড়ে তোলাই মুমিনদের জন্য কল্যাণের পথ।

 

 

ট্যাগ

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

‘ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম’: ফজিলত ও তাৎপর্য

প্রকাশিত হয়েছে: ০৬:০০:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

আল্লাহর ৯৯টি গুণবাচক নামের মধ্যে এক বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ নাম হলো ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম, যেটিকে ইসলামি পরিভাষায় ইসমে আজম বা মহান নাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই নামের তাৎপর্য এবং ফজিলত সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা।

‘জালাল’ শব্দের অর্থ হলো মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব এবং ‘ইকরাম’ মানে সম্মানিত। এই নামের মাধ্যমে আল্লাহর সেই মহান সত্তাকে বোঝানো হয় যিনি সমস্ত সৃষ্টি জগতের মালিক, যিনি ভয় ও ভক্তির যোগ্য এবং যাঁর প্রশংসা করা একমাত্র নিরঙ্কুশভাবে বৈধ ও প্রযোজ্য।

পবিত্র কোরআনে ‘ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ নামটি এসেছে সুরা আর-রহমানের ২৭ ও ৭৮ নম্বর আয়াতে। এই নামটি আল্লাহর দয়া, মহত্ত্ব ও ইহসানের গভীর প্রকাশ ঘটায়।

নবীজি মুহাম্মদ (সা.) সাহাবিদের উদ্দেশে বলেছেন, তোমরা সব সময়ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরামপড়াকে অভ্যাসে পরিণত করো (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫২৫)। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, এই নাম পাঠ করা শুধু দোয়া নয়, বরং একটি ধারাবাহিক ইবাদতের অংশ হতে পারে।

একবার এক ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে এই দোয়া করেন—
আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্না লাকাল হামদু, লা ইলাহা ইল্লা আনতা, আল মান্নান, বাদিউস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম, ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুম

এ কথা শুনে রাসুল (সা.) বলেছিলেন, তুমি আল্লাহকে ইসমে আজম দিয়ে ডাকেছো। এই নামে দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন এবং কিছু চাইলে তা প্রদান করেন (তিরমিজি: ৩৫৪৪; আবু দাউদ: ১৪৯৫; নাসাঈ: ১৩০)।

নামাজ শেষে রাসুল (সা.) বলতেন:
আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারাকতা ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম (মুসলিম, হাদিস: ৫৯১-৫৯২)। এই দোয়া আল্লাহর প্রশান্তি ও সম্মানের প্রকাশ বহন করে।

পবিত্র কোরআনে বারবার আল্লাহর গুণবাচক নাম স্মরণ ও জিকির করার নির্দেশনা এসেছে।
আল্লাহ বলেন—
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো এবং সকালসন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করো (সুরা আহজাব, আয়াত: ৪১-৪২)।
আরও বলা হয়েছে, আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ রয়েছে, তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাকো (সুরা আরাফ, আয়াত: ১৮০)।

বিখ্যাত তাফসিরকার ইমাম আবু জাফর তাবারি (র.) বলেন, আল্লাহর প্রত্যেকটি গুণবাচক নামই ইসমে আজমের অন্তর্ভুক্ত। কেউ যদি এই নামগুলো নিয়মিত জিকির করে, তবে আল্লাহ তাঁর দুনিয়া আখেরাতের কাজ সহজ করে দেবেন।

‘ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ শুধু একটি নাম নয়—এটি আল্লাহর এক অতুলনীয়, মর্যাদাময় সত্তার স্মরণ, যার মাধ্যমে বান্দা তাঁর দয়া ও করুণা অর্জন করতে পারে। কোরআন ও হাদিসে যেভাবে এই নামের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে, তাতে প্রতিদিন এই নাম পাঠের অভ্যাস গড়ে তোলাই মুমিনদের জন্য কল্যাণের পথ।