
জীবনের উত্থান-পতনে একজন মুসলমানের সবচেয়ে বড় আত্মিক শক্তি হলো — আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে তাঁর প্রশংসা করা। আর সেই মহামূল্যবান বিশ্বাসেরই এক পরিপূর্ণ প্রতিফলন হলো এই বাক্যটি — “আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল” (ٱلْـحَـمْـدُ للهِ عَلَىٰ كُـلِّ حَـالٍ), যার অর্থ — “সকল অবস্থায় আল্লাহর জন্যই সমস্ত প্রশংসা।”
এই সংক্ষিপ্ত বাক্যটি কেবল একটি কথা নয় — বরং তা একজন মুমিনের চিন্তা, চেতনা ও বিশ্বাসের প্রকাশ। যখন মানুষ সুখে থাকে, তখন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা সহজ হয়। কিন্তু যখন দুঃখ, কষ্ট বা বিপদ আসে, তখনও আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থেকে এই বাক্য উচ্চারণ করা — ইমানের গভীরতা ও পরিপক্বতার পরিচয় দেয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবাদের শিখিয়েছেন, বিপদের সময়েও যেন তাঁরা বলেন:
“আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল।”
অর্থাৎ: “সকল অবস্থায় আল্লাহর জন্যই সমস্ত প্রশংসা।”
বিশেষ করে এমন পরিস্থিতিতে যখন কেউ বিপদের খবর শুনে “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” বলার পাশাপাশি আল্লাহর প্রশংসা করে — তখন তা তাঁর জন্য অনেক সওয়াবের দরজা খুলে দেয়।
ইসলামে ‘সবর’ (ধৈর্য) এবং ‘শুকর’ (কৃতজ্ঞতা) — এই দুটি গুণ মুমিনের জীবনের দুই স্তম্ভ। আল্লাহ বলেন:
“তোমরা যদি কৃতজ্ঞ হও, তবে অবশ্যই আমি তোমাদের আরো বেশি দেব।”
— (সূরা ইব্রাহিম, আয়াত: ৭)
এই আয়াতের ভিত্তিতেই বোঝা যায়, বিপদের সময় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাও ইবাদতের অংশ।
বর্তমান সময়ে বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা নানা সংকট ও পরীক্ষার সম্মুখীন — যুদ্ধ, দারিদ্র্য, দুর্যোগ, বৈষম্য কিংবা ব্যক্তিগত বিপর্যয়। এই বাস্তবতায় অনেক মুসলমানই সোশ্যাল মিডিয়ায়, দৈনন্দিন কথোপকথনে এবং দোআর মধ্যে “আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল” উচ্চারণ করে নিজের বিশ্বাস ও আশার প্রতিচ্ছবি তুলে ধরছেন।
এই বাক্যটি মনে করিয়ে দেয়, জীবনের প্রতিটি অবস্থায়ই একজন মুমিন আল্লাহর পরিকল্পনার উপর সন্তুষ্ট। যেমন কোনো মা সন্তান হারিয়েও বলেন — “আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল”। কোনো পরিবার গৃহহীন হয়ে আশ্রয়হীন অবস্থায়ও এই বাক্যটি মুখে আনে। এটি এক পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণের প্রকাশ, যার পুরস্কার জান্নাত।
আজকের এই অস্থির ও অনিশ্চিত বিশ্বে “আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল” কেবল একটি বাক্য নয় — এটি একজন মুসলমানের আস্থা, ধৈর্য এবং আল্লাহর প্রতি নির্ভরতার প্রাচীনতম ও সর্বশ্রেষ্ঠ উচ্চারণ।