০১:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

“দিনের ভোট রাতে!”—সিইসি হুদার বিরুদ্ধে রিমান্ডে তদন্ত

প্রহসনের নির্বাচন পরিচালনার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাকে চার দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত। সোমবার (২৩ জুন) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে শুনানি শেষে বিচারক তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে রোববার (২২ জুন) রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন খান বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তিন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ মোট ২৪ জনকে আসামি করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, ভোট ডাকাতি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করা হয়।

সোমবার বিকেলে নুরুল হুদাকে আদালতে হাজির করে শেরেবাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার। তিনি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে আসামির ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি সরকারের পক্ষাবলম্বন করে নির্বাচনী কারচুপিতে সহায়তা করেন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ভেঙে দেন। এই বিষয়ে আরও তথ্য পেতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, সাবেক সিইসি নুরুল হুদা নিশিরাতে ভোটের মাধ্যমে দেশের ভোটাধিকার হরণ করেছেন। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে রাতেই ব্যালট বাক্স ভর্তি করে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে তিনি নির্বাচন কমিশনের শপথ ভঙ্গ করেছেন।

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম সজিব বলেন, মামলার সব ধারাই জামিনযোগ্য এবং এতে রিমান্ড চাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তিনি বলেন, কে এম নুরুল হুদা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ৯ নম্বর সেক্টরের সাব কমান্ডার হিসেবে দেশ স্বাধীনতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। মামলার এজাহার আইনগতভাবে ত্রুটিপূর্ণ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেন তিনি।

শুনানিকালে বিচারক নুরুল হুদাকে প্রশ্ন করেন, তিনি দায়িত্ব পালনকালে শপথ ভঙ্গ করেছেন কি না। উত্তরে নুরুল হুদা বলেন, “না, আমি শপথ ভঙ্গ করিনি।” তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনের দায়িত্ব কমিশনের পাঁচজন সদস্যের এবং পুরো সিস্টেমের ওপর নির্ভর করে। ঢাকায় বসে দেশের প্রতিটি কেন্দ্রে কী ঘটছে তা জানা সম্ভব নয়। নির্বাচন হয়ে গেলে তা হাইকোর্টের বিচারিক এখতিয়ার।”

উভয়পক্ষের দীর্ঘ শুনানি শেষে বিচারক আসামির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। উল্লেখ্য, মামলায় বলা হয়েছে, সাবেক নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা তার দায়িত্ব পালনের সময় সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছেন। নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের প্রার্থীদের ওপর হামলা, হয়রানি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে নির্যাতন চালানো হয়েছে। একই অভিযোগে ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেও প্রহসনের নির্বাচন হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

ট্যাগ

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

“দিনের ভোট রাতে!”—সিইসি হুদার বিরুদ্ধে রিমান্ডে তদন্ত

প্রকাশিত হয়েছে: ১১:৫৯:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

প্রহসনের নির্বাচন পরিচালনার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাকে চার দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত। সোমবার (২৩ জুন) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে শুনানি শেষে বিচারক তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে রোববার (২২ জুন) রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন খান বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তিন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ মোট ২৪ জনকে আসামি করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, ভোট ডাকাতি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করা হয়।

সোমবার বিকেলে নুরুল হুদাকে আদালতে হাজির করে শেরেবাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার। তিনি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে আসামির ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি সরকারের পক্ষাবলম্বন করে নির্বাচনী কারচুপিতে সহায়তা করেন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ভেঙে দেন। এই বিষয়ে আরও তথ্য পেতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, সাবেক সিইসি নুরুল হুদা নিশিরাতে ভোটের মাধ্যমে দেশের ভোটাধিকার হরণ করেছেন। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে রাতেই ব্যালট বাক্স ভর্তি করে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে তিনি নির্বাচন কমিশনের শপথ ভঙ্গ করেছেন।

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম সজিব বলেন, মামলার সব ধারাই জামিনযোগ্য এবং এতে রিমান্ড চাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তিনি বলেন, কে এম নুরুল হুদা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ৯ নম্বর সেক্টরের সাব কমান্ডার হিসেবে দেশ স্বাধীনতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। মামলার এজাহার আইনগতভাবে ত্রুটিপূর্ণ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেন তিনি।

শুনানিকালে বিচারক নুরুল হুদাকে প্রশ্ন করেন, তিনি দায়িত্ব পালনকালে শপথ ভঙ্গ করেছেন কি না। উত্তরে নুরুল হুদা বলেন, “না, আমি শপথ ভঙ্গ করিনি।” তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনের দায়িত্ব কমিশনের পাঁচজন সদস্যের এবং পুরো সিস্টেমের ওপর নির্ভর করে। ঢাকায় বসে দেশের প্রতিটি কেন্দ্রে কী ঘটছে তা জানা সম্ভব নয়। নির্বাচন হয়ে গেলে তা হাইকোর্টের বিচারিক এখতিয়ার।”

উভয়পক্ষের দীর্ঘ শুনানি শেষে বিচারক আসামির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। উল্লেখ্য, মামলায় বলা হয়েছে, সাবেক নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা তার দায়িত্ব পালনের সময় সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছেন। নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের প্রার্থীদের ওপর হামলা, হয়রানি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে নির্যাতন চালানো হয়েছে। একই অভিযোগে ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেও প্রহসনের নির্বাচন হিসেবে উল্লেখ করা হয়।