ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি গাজা উপত্যকায় দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘাতের অবসানে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে বলে মনে করছে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার। বুধবার (২৫ জুন) মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি।
তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরান-ইসরায়েল সংঘাত থামিয়েছেন। এখন সময় এসেছে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার। আমরা বিশ্বাস করি, তিনি (ট্রাম্প) এ ব্যাপারে আন্তরিক, এবং আমরা কাতার হিসেবে তাঁকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।”
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় ১২০০ জন নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়। এর জবাবে ইসরায়েল গাজায় পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করে, যা এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং আহত করেছে ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি।
চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছিল ইসরায়েল। তবে যুদ্ধবিরতির দুই মাস না যেতেই ১৮ মার্চ থেকে পুনরায় গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী)। এর সঙ্গে খাদ্য ও ওষুধসহ মানবিক সহায়তা প্রবেশে কঠোর বাধাও আরোপ করা হয়।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মহল বহুবার নেতানিয়াহুকে যুদ্ধ থামাতে আহ্বান জানালেও, তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন— হামাসকে নিশ্চিহ্ন করা এবং সব জিম্মিকে মুক্ত না করা পর্যন্ত অভিযান চলবে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)-এ ইতোমধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা চলছে।
হামাসের হাতে থাকা ২৫১ জিম্মির মধ্যে কমপক্ষে ৩৫ জন এখনো জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আইডিএফ তাদের সামরিকভাবে উদ্ধারের পরিকল্পনার কথা বলেছে। এই যুদ্ধের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতার মধ্যস্থতার চেষ্টায় আছে।
সম্প্রতি মধ্যস্থতাকারীরা আবারও একটি নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে, যেখানে ইসরায়েল সম্মতি দিলেও হামাস এখনো সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি।
কাতারের পররাষ্ট্র মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি বলেন, “ইরান-ইসরায়েল সংঘাত থামিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আন্তর্জাতিকভাবে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন। এখন তাঁর দৃষ্টি গাজার দিকে দিতে হবে। যুদ্ধ থামানোর জন্য অনেক পথ উন্মুক্ত, কেবল রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, “আমি এখন সব বিস্তারিত বলতে পারছি না। তবে এটুকু বলতে পারি, যদি ওয়াশিংটন আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসে, তাহলে খুব দ্রুতই গাজায় যুদ্ধবিরতি সম্ভব।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা প্রশমিত হতে পারে। কাতারের মতো দেশগুলোর সক্রিয় কূটনৈতিক তৎপরতা এবং আন্তর্জাতিক চাপ—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান— গাজায় যুদ্ধ থামানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রকাশক ও সম্পাদক
© কপিরাইট সমাচার বিশ্ব ২০২৫ | আমাদের ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।