০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

“জলবায়ু হুঙ্কার দিচ্ছে— হয় আমরা থাকব, না হয় তোমরা”: ড. ইউনূস

বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ ও বৃক্ষমেলা-২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “পৃথিবীর সর্বনাশের জন্য যারা দায়ী, তারা আমরা সবাই এখানে হাজির। আমরা আসামি।”

বুধবার (২৫ জুন) সকালে রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।

ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের পুরোনো কবিরা বলে গেছেন— সাগরের সব পানি যদি কালি হতো, আর বনের সব গাছ যদি কলম হতো, তবুও এই অপরাধের বর্ণনা শেষ করা যেত না। একই অপরাধ আমরা প্রতিদিন করে চলেছি।” তিনি পরিবেশ ধ্বংসে মানুষের ভূমিকাকেই মূল দায় হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

তিনি বলেন, “আজকের পৃথিবী নানাবিধ সংকটে আবদ্ধ— যুদ্ধবিগ্রহ, প্রযুক্তির অপব্যবহার ইত্যাদি নানা সমস্যায় আমরা জর্জরিত। তবে সবচেয়ে ভয়ংকর যে সংকট আমরা এখনো উপলব্ধি করছি না, সেটি হলো প্রকৃতির প্রতিক্রিয়া। প্রকৃতির এই বিধ্বংসী রূপ আসলে আমাদেরই সৃষ্টি। এটা প্রকৃতির দোষ নয়— দোষটা হলো প্রকৃতি-বিধ্বংসী এক জীব, যার নাম মানুষ।”

জলবায়ু সংকটের ভয়াবহতা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের সামনে দৈত্যাকারে হাজির হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জলবায়ু সংকট। সে ক্রমাগত হুঙ্কার দিচ্ছে— ‘হয় আমরা থাকব, না হয় তোমরা।’ আমরা দুইজন একসাথে থাকতে পারবো না।”

প্লাস্টিক দূষণ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, “প্লাস্টিকের ব্যবহারে তিন ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে— জলবায়ু সংকট, প্রকৃতিগত সংকট এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি। প্লাস্টিক এমন এক জিনিস, যার জন্ম আছে, কিন্তু মৃত্যু নেই। পৃথিবীর সব কিছুর মৃত্যু আছে, কিন্তু এর মৃত্যু নেই।”

তিনি বলেন, “আমরা দিবস উদযাপন করে ঘরে ফিরে যাব, তারপর যথারীতি প্লাস্টিক ব্যবহার করবো। এই দ্বিচারিতা আমাদের অসহায়তা প্রমাণ করে। আমরা কিছুই করতে পারছি না, অথচ প্লাস্টিক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের ওপর হাসছে।”

জীবনধারার পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা যদি আমাদের লাইফস্টাইল পরিবর্তন না করি, এই যুদ্ধে মানুষের পরাজয় অনিবার্য। কেবল বক্তৃতা বা দিবস উদযাপন নয়, আমাদের প্রতিদিনের আচরণ ও ব্যবহারে পরিবর্তন আনতে হবে।”

অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, পরিবেশবিদ ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।


ট্যাগ

“জলবায়ু হুঙ্কার দিচ্ছে— হয় আমরা থাকব, না হয় তোমরা”: ড. ইউনূস

প্রকাশিত হয়েছে: ০৭:০৫:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ ও বৃক্ষমেলা-২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “পৃথিবীর সর্বনাশের জন্য যারা দায়ী, তারা আমরা সবাই এখানে হাজির। আমরা আসামি।”

বুধবার (২৫ জুন) সকালে রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।

ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের পুরোনো কবিরা বলে গেছেন— সাগরের সব পানি যদি কালি হতো, আর বনের সব গাছ যদি কলম হতো, তবুও এই অপরাধের বর্ণনা শেষ করা যেত না। একই অপরাধ আমরা প্রতিদিন করে চলেছি।” তিনি পরিবেশ ধ্বংসে মানুষের ভূমিকাকেই মূল দায় হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

তিনি বলেন, “আজকের পৃথিবী নানাবিধ সংকটে আবদ্ধ— যুদ্ধবিগ্রহ, প্রযুক্তির অপব্যবহার ইত্যাদি নানা সমস্যায় আমরা জর্জরিত। তবে সবচেয়ে ভয়ংকর যে সংকট আমরা এখনো উপলব্ধি করছি না, সেটি হলো প্রকৃতির প্রতিক্রিয়া। প্রকৃতির এই বিধ্বংসী রূপ আসলে আমাদেরই সৃষ্টি। এটা প্রকৃতির দোষ নয়— দোষটা হলো প্রকৃতি-বিধ্বংসী এক জীব, যার নাম মানুষ।”

জলবায়ু সংকটের ভয়াবহতা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের সামনে দৈত্যাকারে হাজির হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জলবায়ু সংকট। সে ক্রমাগত হুঙ্কার দিচ্ছে— ‘হয় আমরা থাকব, না হয় তোমরা।’ আমরা দুইজন একসাথে থাকতে পারবো না।”

প্লাস্টিক দূষণ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, “প্লাস্টিকের ব্যবহারে তিন ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে— জলবায়ু সংকট, প্রকৃতিগত সংকট এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি। প্লাস্টিক এমন এক জিনিস, যার জন্ম আছে, কিন্তু মৃত্যু নেই। পৃথিবীর সব কিছুর মৃত্যু আছে, কিন্তু এর মৃত্যু নেই।”

তিনি বলেন, “আমরা দিবস উদযাপন করে ঘরে ফিরে যাব, তারপর যথারীতি প্লাস্টিক ব্যবহার করবো। এই দ্বিচারিতা আমাদের অসহায়তা প্রমাণ করে। আমরা কিছুই করতে পারছি না, অথচ প্লাস্টিক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের ওপর হাসছে।”

জীবনধারার পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা যদি আমাদের লাইফস্টাইল পরিবর্তন না করি, এই যুদ্ধে মানুষের পরাজয় অনিবার্য। কেবল বক্তৃতা বা দিবস উদযাপন নয়, আমাদের প্রতিদিনের আচরণ ও ব্যবহারে পরিবর্তন আনতে হবে।”

অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, পরিবেশবিদ ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।