
টানা ১২ দিন ইরানের ওপর বিমান হামলা চালিয়ে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, “লক্ষ্য পূরণ হয়েছে।” কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘোষণার পেছনে বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। বরং এই যুদ্ধে ইসরায়েলই কৌশলগতভাবে পরাজিত হয়েছে, আর ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান এখনো দৃঢ়ভাবে টিকে আছে।
নেতানিয়াহুর ঘোষিত দুটি লক্ষ্য ছিল— ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ধ্বংস করা এবং দেশটিতে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন বা ‘রেজিম চেঞ্জ’। তবে বাস্তবতা হলো, ইরান আগেই তাদের ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনা থেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সরিয়ে ফেলে, ফলে ইসরায়েলের হামলা নিরর্থক হয়ে যায়। পারমাণবিক কর্মসূচির ‘ডিক্যাপিটেশন’ হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র কেবল একটি বাংকার ধ্বংসকারী বোমা ব্যবহার করলেও, সরাসরি ইসরায়েলের অভিযানে সম্পৃক্ত হয়নি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরে নিজেই নেতানিয়াহুকে ফোন করে যুদ্ধ থামাতে বলেন।
দ্বিতীয় লক্ষ্য— ইরানে সরকার পরিবর্তন—তাতেও ব্যর্থতা স্পষ্ট। আইআরজিসির শীর্ষ নেতাদের হত্যার মাধ্যমে জনঅসন্তোষ ছড়াতে চাইলেও উল্টো দেশপ্রেম উসকে ওঠে। জনগণ সরকারের পাশে দাঁড়ায়। বিরোধীরাও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে ঐক্য গড়ে তোলে।
এভিন কারাগারে হামলা চালিয়ে রাজনৈতিক বন্দিদের ‘সহায়তা’র দাবি করলেও, বাস্তবে তাদের অবস্থা আরও খারাপ হয়। অনেককে গোপন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়, যা সরকারের দমননীতিকে আরও জোরদার করেছে।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড সমর্থন পায়নি। ‘ডুমসডে ক্লক’ বা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলার মতো ঘটনা বিশ্বে হাস্যকর বলেই বিবেচিত হয়েছে। ইউরোপ, চীন ও ভারত এখনো তেহরানের সঙ্গে বাণিজ্য করছে। ইরানকে কেউ নিষিদ্ধ রাষ্ট্র ঘোষণা করেনি।
আকাশে প্রাধান্য থাকলেও, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র বারবার ইসরায়েলকে ভেদ করেছে। আয়রন ডোম সিস্টেম ক্ষেপণাস্ত্র সংকটে পড়ে, এবং অর্থনীতিতেও ধস নামে। দেশের ভেতরেই আতঙ্ক ও ভোগান্তি ছড়িয়ে পড়ে।
অন্যদিকে, ইরান শত শত হতাহতের শিকার হলেও রাষ্ট্র হিসেবে ধসে পড়েনি। বরং তারা কৌশলগতভাবে পাল্টা হামলার আগে সতর্কবার্তা দিয়ে বিশ্বে ‘আক্রান্ত দেশ’ হিসেবে পরিচিতি পায়। এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে তেহরানকে বাড়তি সুবিধা দেয়।
এই পরিপ্রেক্ষিতে আল জাজিরা-তে প্রকাশিত এক নিবন্ধে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ওরি গোল্ডবার্গ বলেন, “ইসরায়েল চেয়েছিল শত্রু ধ্বংস করে নিজেকে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের নায়ক হিসেবে প্রমাণ করতে। কিন্তু বাস্তবে, যুদ্ধ থেমে গেছে— তেহরান এখনো দাঁড়িয়ে।”
গোল্ডবার্গ দীর্ঘদিন ধরে ইরান-ভিত্তিক রাজনীতি ও মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করছেন। তিনি পূর্বে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
সর্বশেষ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে নজর দিচ্ছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমার কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না।