০৪:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আল-আকসা: মুসলিম বিশ্বে আধ্যাত্মিক মর্যাদার বাতিঘর

জেরুজালেমের কেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহাসিক আল-আকসা মসজিদ মুসলিম বিশ্বের কাছে এক অনন্য মর্যাদার নাম। এটি শুধু একটি প্রাচীন উপাসনালয় নয়, বরং ইসলামের ইতিহাস, ঈমান ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের গভীর প্রতীক। যুগে যুগে এটি মুসলমানদের ইবাদতের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে এবং বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক হয়ে রয়েছে।

পবিত্র কুরআনে এই মসজিদের মর্যাদা সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। সূরা আল-ইসরার প্রথম আয়াতে বর্ণিত রয়েছে মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর অলৌকিক রাত্রীকালীন সফর—ইসরা ও মিরাজের ঘটনা, যেখানে তিনি মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে আল-আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করেন। আয়াতে আল্লাহ বলেন, “পবিত্র ও মহিমান্বিত তিনি, যিনি তার বান্দাকে এক রাতে ভ্রমণ করালেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার চারপাশ আমরা করেছি বরকতময়…” (সূরা আল-ইসরা: ১)

এই আয়াতে আল-আকসার পবিত্রতা ও ঐ অঞ্চলের বরকতের কথা সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলামী ঐতিহ্য অনুযায়ী, অনেক নবী এই ভূমিতে জন্মগ্রহণ করেছেন, বসবাস করেছেন এবং আল্লাহর ইবাদত করেছেন।

ইসলামের সূচনালগ্নে মুসলমানদের কিবলা ছিল এই আল-আকসা মসজিদ। পরবর্তীতে আল্লাহর আদেশে কাবা শরিফকে স্থায়ী কিবলা নির্ধারণ করা হয়। তবুও আল-আকসার প্রতি সেই ঈমানদীপ্ত শ্রদ্ধা আজও অপরিবর্তিত।

ইসরা ও মিরাজের ঐতিহাসিক রাতের বর্ণনায় জানা যায়, মহানবী মুহাম্মদ (সা.) আল-আকসা মসজিদে সকল নবীদের ইমামতি করেন এবং সেখান থেকে সপ্তাকাশ অতিক্রম করে আল্লাহর নিকটবর্তী স্থানে পৌঁছান। এই ঘটনাই আল-আকসাকে পরিণত করেছে আধ্যাত্মিক ভ্রমণের এক প্রতীকী কেন্দ্রে।

হাদিসে আল-আকসায় নামাজ আদায়ের বিশেষ ফজিলতের কথাও উল্লেখ রয়েছে। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “মসজিদে হারামে এক নামাজ এক লক্ষ নামাজের সমান, আমার মসজিদে এক হাজার নামাজের সমান এবং মসজিদুল আকসায় এক নামাজ পাঁচশ নামাজের সমান।” (বায়হাকি)

এছাড়া সহিহ বুখারির একটি হাদিসে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে সর্বপ্রথম মসজিদ হিসেবে নির্মিত হয় মসজিদুল হারাম এবং এর ৪০ বছর পর নির্মিত হয় মসজিদুল আকসা। ফলে এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম মসজিদগুলোর অন্যতম, যা ইসলামের আদি নিদর্শন বহন করে।

বর্তমানে আল-আকসা মসজিদ নানা রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। দখলদার শক্তির নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝেও বিশ্ব মুসলিমদের হৃদয়ে এ মসজিদ রয়েছে গভীরভাবে প্রোথিত। মুসলমানরা এখনো এই মসজিদে নামাজ আদায়কে সৌভাগ্য ও ফজিলতের কাজ হিসেবে গণ্য করেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আল-আকসা শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়, বরং এটি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, আত্মপরিচয় ও বিশ্বাসের প্রতীক। এই মসজিদকে ঘিরে বিশ্ব মুসলিমদের আবেগ, সম্মান ও দায়বদ্ধতা সময়ের সাথেই আরও দৃঢ়তর হচ্ছে।

ট্যাগ

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

আল-আকসা: মুসলিম বিশ্বে আধ্যাত্মিক মর্যাদার বাতিঘর

প্রকাশিত হয়েছে: ০৬:৫৩:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

জেরুজালেমের কেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহাসিক আল-আকসা মসজিদ মুসলিম বিশ্বের কাছে এক অনন্য মর্যাদার নাম। এটি শুধু একটি প্রাচীন উপাসনালয় নয়, বরং ইসলামের ইতিহাস, ঈমান ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের গভীর প্রতীক। যুগে যুগে এটি মুসলমানদের ইবাদতের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে এবং বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক হয়ে রয়েছে।

পবিত্র কুরআনে এই মসজিদের মর্যাদা সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। সূরা আল-ইসরার প্রথম আয়াতে বর্ণিত রয়েছে মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর অলৌকিক রাত্রীকালীন সফর—ইসরা ও মিরাজের ঘটনা, যেখানে তিনি মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে আল-আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করেন। আয়াতে আল্লাহ বলেন, “পবিত্র ও মহিমান্বিত তিনি, যিনি তার বান্দাকে এক রাতে ভ্রমণ করালেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার চারপাশ আমরা করেছি বরকতময়…” (সূরা আল-ইসরা: ১)

এই আয়াতে আল-আকসার পবিত্রতা ও ঐ অঞ্চলের বরকতের কথা সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলামী ঐতিহ্য অনুযায়ী, অনেক নবী এই ভূমিতে জন্মগ্রহণ করেছেন, বসবাস করেছেন এবং আল্লাহর ইবাদত করেছেন।

ইসলামের সূচনালগ্নে মুসলমানদের কিবলা ছিল এই আল-আকসা মসজিদ। পরবর্তীতে আল্লাহর আদেশে কাবা শরিফকে স্থায়ী কিবলা নির্ধারণ করা হয়। তবুও আল-আকসার প্রতি সেই ঈমানদীপ্ত শ্রদ্ধা আজও অপরিবর্তিত।

ইসরা ও মিরাজের ঐতিহাসিক রাতের বর্ণনায় জানা যায়, মহানবী মুহাম্মদ (সা.) আল-আকসা মসজিদে সকল নবীদের ইমামতি করেন এবং সেখান থেকে সপ্তাকাশ অতিক্রম করে আল্লাহর নিকটবর্তী স্থানে পৌঁছান। এই ঘটনাই আল-আকসাকে পরিণত করেছে আধ্যাত্মিক ভ্রমণের এক প্রতীকী কেন্দ্রে।

হাদিসে আল-আকসায় নামাজ আদায়ের বিশেষ ফজিলতের কথাও উল্লেখ রয়েছে। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “মসজিদে হারামে এক নামাজ এক লক্ষ নামাজের সমান, আমার মসজিদে এক হাজার নামাজের সমান এবং মসজিদুল আকসায় এক নামাজ পাঁচশ নামাজের সমান।” (বায়হাকি)

এছাড়া সহিহ বুখারির একটি হাদিসে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে সর্বপ্রথম মসজিদ হিসেবে নির্মিত হয় মসজিদুল হারাম এবং এর ৪০ বছর পর নির্মিত হয় মসজিদুল আকসা। ফলে এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম মসজিদগুলোর অন্যতম, যা ইসলামের আদি নিদর্শন বহন করে।

বর্তমানে আল-আকসা মসজিদ নানা রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। দখলদার শক্তির নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝেও বিশ্ব মুসলিমদের হৃদয়ে এ মসজিদ রয়েছে গভীরভাবে প্রোথিত। মুসলমানরা এখনো এই মসজিদে নামাজ আদায়কে সৌভাগ্য ও ফজিলতের কাজ হিসেবে গণ্য করেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আল-আকসা শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়, বরং এটি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, আত্মপরিচয় ও বিশ্বাসের প্রতীক। এই মসজিদকে ঘিরে বিশ্ব মুসলিমদের আবেগ, সম্মান ও দায়বদ্ধতা সময়ের সাথেই আরও দৃঢ়তর হচ্ছে।