চীনের বিজ্ঞানীরা বাদুড়ের শরীরে দুইটি নতুন ভাইরাস শনাক্ত করেছেন, যেগুলোর মধ্যে একটি মস্তিষ্কে এবং অপরটি ফুসফুসে আক্রমণ করতে সক্ষম। ভাইরাস দুইটি এখনই মানবদেহে সংক্রমিত না হলেও গবেষকরা বলছেন, এগুলো ভবিষ্যতে মানুষের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব চীনের বনাঞ্চল ও ফলের বাগান ঘিরে। সেখানে বাদুড়ের শরীর থেকে সংগ্রহ করা নমুনা বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখেছেন, একটি ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য নিউরোট্রপিক, অর্থাৎ এটি সরাসরি মস্তিষ্কে আক্রমণ করতে পারে; যার ফলে এনসেফালাইটিস বা স্নায়বিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। অন্য ভাইরাসটি শ্বাসযন্ত্রে আক্রমণ করে, ফুসফুস ধ্বংস করতে পারে এবং নিউমোনিয়া বা গুরুতর শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভাইরাসগুলো বাদুড়ের শরীরে থাকা অবস্থায় নিরীহ হলেও, মিউটেশনের মাধ্যমে মানুষের কোষে প্রবেশের ক্ষমতা অর্জন করতে পারে। এর ফলে মানবদেহে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, বাদুড় সাধারণত ফল খায় এবং বাগানে ঘোরাফেরা করে। তারা যে ফল ছোঁয় বা আংশিক খেয়ে ফেলে, সেই ফল মানুষ খেলে ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।

যদিও এই ভাইরাসের মানব-সংক্রমণের প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি, তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ফল বা বাদুড়ের বসবাসের এলাকায় সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। কাঁচা ফল ভালোভাবে না ধুয়ে খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

তবে গবেষকেরা সতর্ক করেছেন, বাদুড়কে ধ্বংস বা বিতাড়নের চেষ্টা না করে বরং প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার দিকেই মনোযোগ দিতে হবে। কারণ বাদুড় অনেকক্ষেত্রেই পরিবেশের জন্য উপকারী প্রাণী। তারা ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে কৃষিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

চীনা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (WHO) বিষয়টি নজরে রেখেছে। এ ধরনের ভাইরাস ভবিষ্যতে মহামারির ঝুঁকি তৈরি করতে পারে কিনা, তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. ক্লেয়ার হ্যামিলটন বলেন, “এই ধরনের ভাইরাসগুলো এখনই বিপদজনক নয়, তবে নজরদারি অত্যন্ত জরুরি। ইতিহাস আমাদের দেখিয়েছে, বাদুড় থেকেই SARS, MERS ও COVID-19-এর মতো ভাইরাস মানুষের শরীরে এসেছে।”

এই নতুন ভাইরাস দুটি নিয়ে বৈজ্ঞানিক মহলে উদ্বেগ তৈরি হলেও, আপাতত জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্কের কোনো প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছে গবেষক দল। বরং ফল ধোয়ে খাওয়া, বাদুড়ের ঘন ঘেঁষা এলাকায় সতর্ক থাকা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।