বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI (Artificial Intelligence) বর্তমানে মানুষের জীবনধারার প্রতিটি স্তরে গভীরভাবে প্রবেশ করছে। এই প্রযুক্তি যেমন আমাদের জীবনকে সহজ, দ্রুত ও স্মার্ট করে তুলছে, তেমনি কিছু জায়গায় তা নতুন ঝুঁকিরও জন্ম দিচ্ছে। AI-এর ব্যবহার এখন উন্নয়ন ও সতর্কতার এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে।
প্রযুক্তিতে বিপ্লব ঘটাচ্ছে AI
চিকিৎসা, কৃষি, শিক্ষা ও ব্যবসা—প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই AI-এর ব্যবহার বেড়েছে বহুগুণ। রোগ নির্ণয়, অপারেশনের পরিকল্পনা কিংবা অনলাইন ভিত্তিক স্বাস্থ্য পরামর্শে এখন AI গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কৃষি খাতে আবহাওয়া, মাটি ও কীটনাশক ব্যবস্থাপনায় AI সহায়ক ভূমিকা পালন করছে, যা উৎপাদন বৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
শুধু তাই নয়, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং শহরের সিসিটিভি পর্যবেক্ষণেও AI প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। বড় ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রশাসন ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর হয়ে উঠেছে।
সম্ভাবনার আড়ালে লুকিয়ে থাকা ঝুঁকি
তবে প্রযুক্তির এই প্রসার যেমন সুবিধা বয়ে আনছে, তেমনি কিছু গুরুতর প্রশ্নও তুলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, AI ব্যবহারে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা হলো গোপনীয়তা। ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তি অনেক সময় নাগরিকের অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
এছাড়া, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডিপফেইক প্রযুক্তির অপব্যবহার বাড়ছে। AI-এর মাধ্যমে তৈরি করা ভুয়া ভিডিও ও অডিও রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে, যা সামাজিক অস্থিরতা বাড়াতে পারে।
একই সঙ্গে শ্রমবাজারেও AI-এর প্রভাব স্পষ্ট। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অটোমেশন বৃদ্ধির ফলে মানুষ-নির্ভর কাজগুলো কমে যাচ্ছে। কল সেন্টার, ব্যাংকিং বা প্রশাসনিক কাজে AI ব্যবহারের ফলে চাকরি হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে নিম্ন-মধ্যবিত্ত কর্মীদের জন্য।
অস্ত্রায়ন ও যুদ্ধক্ষেত্রে AI
সবচেয়ে আশঙ্কাজনক হলো যুদ্ধক্ষেত্রে AI-এর প্রয়োগ। স্বয়ংক্রিয় ড্রোন, মিসাইল ও নজরদারি প্রযুক্তিতে AI ব্যবহারের ফলে যুদ্ধ আরও ভয়াবহ ও মানবহীন হয়ে উঠতে পারে। অনেক সময় এসব অস্ত্র মানবিক বিবেচনা ছাড়াই আক্রমণ চালাতে পারে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতির পরিপন্থী।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে করণীয়
AI ব্যবহারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন নৈতিক ও আইনগত কাঠামো। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখনো এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতি গৃহীত হয়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আন্তর্জাতিকভাবে সমন্বিত একটি নীতিমালার আওতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার পরিচালিত না হলে এর ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একদিকে যেমন আমাদের জীবনের গতি ও মান উন্নত করতে পারে, তেমনি অপব্যবহারে তা হয়ে উঠতে পারে নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিরতার উৎস। সুতরাং প্রয়োজন সচেতন, দায়িত্বশীল এবং নৈতিকভাবে পরিচালিত একটি প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যৎ।
আপনি চাইলে এই প্রতিবেদনটি নির্দিষ্ট পত্রিকার ফরম্যাটে সম্পাদনা, শিরোনামে পরিবর্তন, বা গ্রাফিক্স-সহ উপস্থাপনার জন্যও তৈরি করে দিতে পারি। নির্দেশনা দিন, আমি সেটাও করে দিচ্ছি।
প্রকাশক ও সম্পাদক
© কপিরাইট সমাচার বিশ্ব ২০২৫ | আমাদের ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।