০৩:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেষ ঠিকানার কারিগর আর নেই: কিশোরগঞ্জের মনু মিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া

বিনা পারিশ্রমিকে জীবনের প্রায় অর্ধশত বছর ধরে কবর খুঁড়ে গেছেন কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার মানবিক মানুষ মনু মিয়া (৬৭)। আজ শনিবার (২৮ জুন) সকালে এই ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ চিরবিদায় নিয়েছেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

মনু মিয়া ছিলেন একজন নিঃসন্তান মানুষ, যিনি জীবনের বড় অংশই বিলিয়ে দিয়েছেন অন্যের প্রয়োজনে। আশপাশের গ্রামের কেউ মারা গেলেই নিজের লাল ঘোড়ায় চড়ে সেখানে ছুটে যেতেন তিনি কবর খুঁড়তে। বিনিময়ে তিনি কখনো কোনো টাকা নেননি, চাইলেনও না কিছু।

কিন্তু চলতি বছরের মে মাসে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। কিছু দুর্বৃত্ত মনু মিয়ার প্রিয় লাল ঘোড়াটিকে মেরে ফেলে। এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে মানুষের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অভিনেতা খায়রুল বাসারও ঘটনাটি দেখে মনু মিয়ার পাশে দাঁড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা করেন মনু মিয়ার সঙ্গে, এমনকি নতুন ঘোড়া কিনে দেওয়ার প্রস্তাবও দেন তিনি। কিন্তু বিনয়ের সঙ্গে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন মনু মিয়া। তার এই আত্মসম্মানবোধ ও নিঃস্বার্থ মনোভাব মুগ্ধ করে অনেককেই।

আজ সকালে তার মৃত্যুর খবর পেয়ে শোকাহত হন অভিনেতা খায়রুল বাসার। জানা যায়, আজ সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে পুরস্কার নেওয়ার কথা ছিল তার, তবে তিনি সেই অনুষ্ঠান বাতিল করে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন মনু মিয়াকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে।

মনু মিয়ার স্বজনেরা জানান, কবর খোঁড়ার কাজ করতে গিয়ে নিজের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল না রাখায় শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধে। গত ১৪ মে তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও আজ আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেন।

স্থানীয়রা বলেন, মনু মিয়া ছিলেন নিঃস্বার্থ মানবতার এক উজ্জ্বল প্রতীক। মৃত্যু তাকে ছিনিয়ে নিলেও, বহু মানুষের হৃদয়ে তিনি অমর হয়ে থাকবেন।

ট্যাগ

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

শেষ ঠিকানার কারিগর আর নেই: কিশোরগঞ্জের মনু মিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া

প্রকাশিত হয়েছে: ০৯:১৭:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

বিনা পারিশ্রমিকে জীবনের প্রায় অর্ধশত বছর ধরে কবর খুঁড়ে গেছেন কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার মানবিক মানুষ মনু মিয়া (৬৭)। আজ শনিবার (২৮ জুন) সকালে এই ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ চিরবিদায় নিয়েছেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

মনু মিয়া ছিলেন একজন নিঃসন্তান মানুষ, যিনি জীবনের বড় অংশই বিলিয়ে দিয়েছেন অন্যের প্রয়োজনে। আশপাশের গ্রামের কেউ মারা গেলেই নিজের লাল ঘোড়ায় চড়ে সেখানে ছুটে যেতেন তিনি কবর খুঁড়তে। বিনিময়ে তিনি কখনো কোনো টাকা নেননি, চাইলেনও না কিছু।

কিন্তু চলতি বছরের মে মাসে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। কিছু দুর্বৃত্ত মনু মিয়ার প্রিয় লাল ঘোড়াটিকে মেরে ফেলে। এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে মানুষের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অভিনেতা খায়রুল বাসারও ঘটনাটি দেখে মনু মিয়ার পাশে দাঁড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা করেন মনু মিয়ার সঙ্গে, এমনকি নতুন ঘোড়া কিনে দেওয়ার প্রস্তাবও দেন তিনি। কিন্তু বিনয়ের সঙ্গে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন মনু মিয়া। তার এই আত্মসম্মানবোধ ও নিঃস্বার্থ মনোভাব মুগ্ধ করে অনেককেই।

আজ সকালে তার মৃত্যুর খবর পেয়ে শোকাহত হন অভিনেতা খায়রুল বাসার। জানা যায়, আজ সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে পুরস্কার নেওয়ার কথা ছিল তার, তবে তিনি সেই অনুষ্ঠান বাতিল করে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন মনু মিয়াকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে।

মনু মিয়ার স্বজনেরা জানান, কবর খোঁড়ার কাজ করতে গিয়ে নিজের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল না রাখায় শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধে। গত ১৪ মে তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও আজ আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেন।

স্থানীয়রা বলেন, মনু মিয়া ছিলেন নিঃস্বার্থ মানবতার এক উজ্জ্বল প্রতীক। মৃত্যু তাকে ছিনিয়ে নিলেও, বহু মানুষের হৃদয়ে তিনি অমর হয়ে থাকবেন।