১০:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জান্নাত ও জাহান্নাম ঘিরে সাহাবির সরল প্রার্থনায় রাসূল (সা.)-এর প্রশংসা

🕊️ নবীজির (ﷺ) উত্তরে যে শিক্ষা

যখন সাহাবী বললেন, “আমি জানি না কীভাবে লম্বা দোআ করতে হয়”—
তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর দোআর গভীর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করলেন।

🔹 যেন বুঝিয়ে দিলেন, “বাক্যের দৈর্ঘ্য নয়, বরং অন্তরের গভীরতা ও উদ্দেশ্যই মুখ্য।”
🔹 তুমি যখন জান্নাত চাও, তখন প্রকৃত অর্থে তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি, নেক আমল, কল্যাণকর জীবন—সবই চাইছো।
🔹 আর যখন তুমি জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাও, তখন তুমি গোনাহ, কুপ্রবৃত্তি, কষ্টকর মৃত্যু, আজাব থেকে মুক্তি চাইছো।

মদিনার মসজিদে নববীতে একদিন নামায শেষে বের হচ্ছিলেন আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা.)। পথে তিনি লক্ষ্য করলেন, একজন সাহাবি নামায শেষ করেও নফল নামাযে ব্যস্ত। সেই সাহাবি অত্যন্ত আন্তরিকতা ও আবেগের সাথে কেবল একটি ছোট্ট দোআ বারবার করে বলছেন: “আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ’উযুবিকা মিনান্নার”—অর্থাৎ, “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত প্রার্থনা করি এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় চাই।”

রাসূল (সা.) সাহাবির এই সংক্ষিপ্ত অথচ গভীর অর্থবোধক দোআ শুনে থেমে যান। নামায শেষে তিনি সাহাবিটিকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন, “তুমি শুধু এই একটি দোআই করলে? আল্লাহর কাছে অন্য কিছু চাও না?” উত্তরে সেই সাহাবি বিনয়সহকারে বলেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আপনার বা মুয়ায ইবনে জাবাল (রাঃ)-এর মতো দীর্ঘ ও জটিল দোআ জানি না। আমি কেবল এটুকুই বুঝি—জান্নাত চাই, আর জাহান্নাম থেকে বাঁচতে চাই।”

এই সরল উত্তর শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) আনন্দ প্রকাশ করেন এবং বলেন, “তুমি জানো, দুনিয়ার সব দোআ, সব প্রয়োজন, সব কামনা—এই একটি দোআর মধ্যেই নিহিত আছে। তুমি আল্লাহর কাছে বলেছো যেন তিনি তোমার জন্য সেই কাজগুলো সহজ করে দেন যা তোমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে, আর তিনি যেন তোমাকে বাঁচিয়ে রাখেন সেই কাজগুলো থেকে, যা তোমাকে জাহান্নামের দিকে ধাবিত করবে।”

এ ঘটনা প্রমাণ করে, ইসলামে প্রার্থনার মূল হচ্ছে আন্তরিকতা ও নির্ভেজাল বিশ্বাস। বড় বা কঠিন ভাষার দোআ নয়, বরং আল্লাহর সঙ্গে একটি গভীর হৃদয় সংযোগই মুমিনের কামিয়াবির চাবিকাঠি।

এই প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) আরও বলেছেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তিনবার জান্নাত প্রার্থনা করে, জান্নাত আল্লাহর কাছে দোআ করে—‘হে আল্লাহ, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান।’ আর যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তিনবার জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চায়, জাহান্নামও দোআ করে—‘হে আল্লাহ, তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন।’” (তিরমিযি, হাদীস: ২৫৭২)

বিশ্বের খ্যাতনামা মুফাসসির, মুহাদ্দিস ও আলেমদের সম্মিলিত মত হলো, এই দোআটি প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ও প্রতি নামাযে অন্তত তিনবার করে পড়া উচিত। এটি শুধু একটি দোআ নয়—বরং একজন মুসলমানের জীবনের মুলমন্ত্র।

📜 তিরমিযির হাদীসটি (২৫৭২):

“من سأل الله الجنة ثلاث مرات قالت الجنة: اللهم أدخله الجنة، ومن استجار من النار ثلاث مرات قالت النار: اللهم أجره من النار”

অর্থ: “যে ব্যক্তি তিনবার আল্লাহর কাছে জান্নাত চায়, জান্নাত বলে, ‘হে আল্লাহ! তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান।’ আর যে ব্যক্তি তিনবার জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চায়, জাহান্নাম বলে, ‘হে আল্লাহ! তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন।’” — [তিরমিযি, হাদীস: ২৫৭২, সহীহ]

ট্যাগ
জনপ্রিয় সংবাদ

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

জান্নাত ও জাহান্নাম ঘিরে সাহাবির সরল প্রার্থনায় রাসূল (সা.)-এর প্রশংসা

প্রকাশিত হয়েছে: ০৭:৩৩:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

🕊️ নবীজির (ﷺ) উত্তরে যে শিক্ষা

যখন সাহাবী বললেন, “আমি জানি না কীভাবে লম্বা দোআ করতে হয়”—
তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর দোআর গভীর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করলেন।

🔹 যেন বুঝিয়ে দিলেন, “বাক্যের দৈর্ঘ্য নয়, বরং অন্তরের গভীরতা ও উদ্দেশ্যই মুখ্য।”
🔹 তুমি যখন জান্নাত চাও, তখন প্রকৃত অর্থে তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি, নেক আমল, কল্যাণকর জীবন—সবই চাইছো।
🔹 আর যখন তুমি জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাও, তখন তুমি গোনাহ, কুপ্রবৃত্তি, কষ্টকর মৃত্যু, আজাব থেকে মুক্তি চাইছো।

মদিনার মসজিদে নববীতে একদিন নামায শেষে বের হচ্ছিলেন আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা.)। পথে তিনি লক্ষ্য করলেন, একজন সাহাবি নামায শেষ করেও নফল নামাযে ব্যস্ত। সেই সাহাবি অত্যন্ত আন্তরিকতা ও আবেগের সাথে কেবল একটি ছোট্ট দোআ বারবার করে বলছেন: “আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ’উযুবিকা মিনান্নার”—অর্থাৎ, “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত প্রার্থনা করি এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় চাই।”

রাসূল (সা.) সাহাবির এই সংক্ষিপ্ত অথচ গভীর অর্থবোধক দোআ শুনে থেমে যান। নামায শেষে তিনি সাহাবিটিকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন, “তুমি শুধু এই একটি দোআই করলে? আল্লাহর কাছে অন্য কিছু চাও না?” উত্তরে সেই সাহাবি বিনয়সহকারে বলেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আপনার বা মুয়ায ইবনে জাবাল (রাঃ)-এর মতো দীর্ঘ ও জটিল দোআ জানি না। আমি কেবল এটুকুই বুঝি—জান্নাত চাই, আর জাহান্নাম থেকে বাঁচতে চাই।”

এই সরল উত্তর শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) আনন্দ প্রকাশ করেন এবং বলেন, “তুমি জানো, দুনিয়ার সব দোআ, সব প্রয়োজন, সব কামনা—এই একটি দোআর মধ্যেই নিহিত আছে। তুমি আল্লাহর কাছে বলেছো যেন তিনি তোমার জন্য সেই কাজগুলো সহজ করে দেন যা তোমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে, আর তিনি যেন তোমাকে বাঁচিয়ে রাখেন সেই কাজগুলো থেকে, যা তোমাকে জাহান্নামের দিকে ধাবিত করবে।”

এ ঘটনা প্রমাণ করে, ইসলামে প্রার্থনার মূল হচ্ছে আন্তরিকতা ও নির্ভেজাল বিশ্বাস। বড় বা কঠিন ভাষার দোআ নয়, বরং আল্লাহর সঙ্গে একটি গভীর হৃদয় সংযোগই মুমিনের কামিয়াবির চাবিকাঠি।

এই প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) আরও বলেছেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তিনবার জান্নাত প্রার্থনা করে, জান্নাত আল্লাহর কাছে দোআ করে—‘হে আল্লাহ, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান।’ আর যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তিনবার জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চায়, জাহান্নামও দোআ করে—‘হে আল্লাহ, তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন।’” (তিরমিযি, হাদীস: ২৫৭২)

বিশ্বের খ্যাতনামা মুফাসসির, মুহাদ্দিস ও আলেমদের সম্মিলিত মত হলো, এই দোআটি প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ও প্রতি নামাযে অন্তত তিনবার করে পড়া উচিত। এটি শুধু একটি দোআ নয়—বরং একজন মুসলমানের জীবনের মুলমন্ত্র।

📜 তিরমিযির হাদীসটি (২৫৭২):

“من سأل الله الجنة ثلاث مرات قالت الجنة: اللهم أدخله الجنة، ومن استجار من النار ثلاث مرات قالت النار: اللهم أجره من النار”

অর্থ: “যে ব্যক্তি তিনবার আল্লাহর কাছে জান্নাত চায়, জান্নাত বলে, ‘হে আল্লাহ! তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান।’ আর যে ব্যক্তি তিনবার জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চায়, জাহান্নাম বলে, ‘হে আল্লাহ! তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন।’” — [তিরমিযি, হাদীস: ২৫৭২, সহীহ]