
রাশিয়া তার সামরিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সব ধরনের সমরাস্ত্রের উৎপাদন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সমরাস্ত্র উৎপাদনকারী এই দেশটির শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আন্তন আলিখানোভ এ ঘোষণা দেন। বুধবার দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দুমায় বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি জানান, রাশিয়ার সব অস্ত্র কারখানাই বর্তমানে উৎপাদনে ব্যস্ত এবং সামরিক সরঞ্জামের চাহিদা আরও বাড়ায় সেই উৎপাদন বহুগুণে বাড়ানো হচ্ছে।
মন্ত্রী আলিখানোভ বলেন, “সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। তিনি রাষ্ট্রীয় অস্ত্র নির্মাণ কর্মসূচিকে আরও শক্তিশালী করতে বলেছেন। আমরা সেই নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুত কাজ করছি। শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে— সব ধরনের অস্ত্র ও গোলাবারুদের উৎপাদন বাড়ানো হবে।” তিনি আরও জানান, এ পদক্ষেপ কেবল রাশিয়ার নিরাপত্তা জোরদারের উদ্দেশ্যে নয়, বরং যুদ্ধক্ষেত্রে কার্যকারিতা বাড়ানো এবং বৈশ্বিক অস্ত্র রপ্তানি বাজারেও রাশিয়ার অবস্থান আরও শক্তিশালী করার কৌশলের অংশ।
এদিকে, সুইডেনভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপ্রি) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিশ্বে সমরাস্ত্র উৎপাদনে রাশিয়া বর্তমানে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং দ্বিতীয় স্থানে আছে ফ্রান্স। সিপ্রি বলেছে, ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে রাশিয়ার সামরিক শিল্প ব্যাপকভাবে সক্রিয় হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম দেশ রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীও বিশাল। বিশাল এই বাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকায়নের জন্য বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম প্রয়োজন হয়। ২০২২ সালে শুরু হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া ব্যাপকভাবে অস্ত্র ব্যয় করছে। ফলে যুদ্ধ পরিচালনার পাশাপাশি নিজেদের মজুদ পূরণ করতে রাশিয়াকে প্রতিনিয়ত সমরাস্ত্র উৎপাদন বাড়াতে হচ্ছে।
শুধু নিজ দেশের প্রয়োজনই নয়, বিশ্ববাজারেও রাশিয়ার তৈরি অস্ত্রের চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে ভারত রুশ সমরাস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। পাশাপাশি চীন, মিসর, আলজেরিয়া, ভিয়েতনামসহ অন্তত ১০টি দেশ রাশিয়া থেকে তাদের অধিকাংশ সামরিক সরঞ্জাম আমদানি করে থাকে। এই বৈশ্বিক চাহিদার কারণেও রাশিয়ার অস্ত্রশিল্প আরও গতিশীল হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় রাশিয়া নিজস্ব প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদার করতে যেমন উৎপাদন বাড়াচ্ছে, তেমনি আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাজারে আধিপত্য ধরে রাখার লক্ষ্যও রয়েছে। ভবিষ্যতে এই প্রবণতা রাশিয়ার সামরিক ও ভূরাজনৈতিক কৌশলে বড় প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করছেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা